পুরোনো প্রশাসনিক কার্যালয়ে স্থানান্তর হচ্ছে মনোরোগ বিভাগ

চমেক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগটি চলতি সপ্তাহে পুরোনো প্রশাসনিক কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. পঞ্চানন আচার্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পায়। চলতি সপ্তাহে আমরা উঠে যাবো। সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। নতুন ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যাও বাড়ছে না। আগের ২৩ শয্যাই থাকবে। তবে ওয়ার্ডে ফ্লোর টাইলস লাগানো এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের (এসি) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

চিকিৎসার মান বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি চিকিৎসার মান বাড়বে। আগের ওয়ার্ডে স্যাঁতস্যাঁতে ও অন্ধকার পরিবেশ ছিলো। দোতালায় গেলে আমরা পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাবো। রোগীদের ভালো একটা পরিবেশ দিতে পারবো।’

মনোরোগ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন,‘ আমরা আমাদের ওয়ার্ডের জিনিসপত্র দোতালায় নিয়ে যাচ্ছি। জিনিসপত্র বেশি হওয়ায় প্রস্তুতি নিতে একটু সময় লাগছে। দোতালায় গেলে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি মিলবে। বর্তমানে যেখানে আছি সেখানে ভবনের পেছনেই আবর্জনা ফেলা হয়।’

এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘মনোরোগ বিভাগটিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছিলোনা। পুরোনো প্রশাসনিক কার্যালয়ের ব্লকটিও খালি পড়ে রয়েছে। তাই আমরা সেখানে মনোরোগ বিভাগটি স্থানান্তর করছি। সুন্দর পরিবেশে রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবেন।’

তবে নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকা মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ নতুন জায়গা পেলেও থাকছে পুরোনো সংকট।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডে কেউ অযথা চিৎকার চেঁচামেচি করছে। কেউ গান ধরছে বেসুরো গলায়। কেউ চিকিৎসকের কাছে ছোট শিশুর মতো বায়না ধরছে। কারো হাত-পা বেঁধে সিটে ফেলে রাখা হয়েছে। কাউকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ইনজেকশন দিয়ে। এসব পুরোটাই চলছে ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশে। শয্যা না পাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে। এসব দেখে বুঝার উপায় নেই, এটি পরিত্যক্ত ঘর নাকি হাসপাতালের ওয়ার্ড। লোকবল বলতে কাজ করছে হাতেগোনা তিন-চারজন। এর মধ্যে যারা নার্স রয়েছেন তাদেরও নেই মনোরোগী সামলানোর তেমন কোনো প্রশিক্ষণ। এরপরও চালু রয়েছে বহির্বিভাগ। যেখানে ১০ টাকার টিকিট কেটে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগীরা পরামর্শ নেয় চিকিৎসকের। ওয়ার্ডের ভেতরে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ রোগী ভর্তি থাকে। জায়গা সংকটে শ্রেণিকক্ষেই দেওয়া হয় রোগীদের কাউন্সেলিং।

মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. পঞ্চানন আচার্য বলেন, ‘ওয়ার্ডে সমস্যার শেষ নেই। প্রথমত জনবলের সমস্যা। বর্তমান কাঠামোতে একজন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকের পদ খালি রয়েছে। এছাড়া সহকারী অধ্যাপক পদে তিনজনের মধ্যে শুধু আমি একজন রয়েছি। বাকি পদ খালি পড়ে আছে। কাউন্সেলিং করানো, রোগী দেখা, প্রশাসনিক নানা কাজ আমাকে একাই করতে হয়। যেসব কাজ ৬ জনের করার কথা, সেসব আমাকে একাই করতে হয়। রেজিস্ট্রার, মেডিক্যাল অফিসার, মিড লেভেল চিকিৎসকের পদ দুটাও খালি আছে। এছাড়া ৮-৯ জন মেডিক্যাল স্টাফ দরকার।

সংকটের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নার্সের সংকট সব সময় থাকে। বিশেষ করে দক্ষ নার্স। মনোরোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স দরকার। নার্স থাকলেও অদক্ষ বলা যায় তাদের, কারণ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তাদের পাঠানো হয়। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা যায় মনোরোগীদের সাথে সেভাবে আচরণ করা যায় না। রয়েছে ওয়ার্ড বয়ের সংকটও। সরকারিভাবে ওয়ার্ড বয় রয়েছেন মাত্র একজন। তাকে সহাযোগিতার জন্য রয়েছে আরও দুজন। রোগী অনুযায়ী এখানে ৬ থেকে ৭ জন থাকা জরুরি। একজন মানসিক রোগীর চিকিৎসার প্রায় সব কাজে আরো জনবল দরকার। ওয়ার্ড বয়ের কাজও অনেক সময় চিকিৎসকদের করতে হয়।’

ওষুধ সংকটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারি বাজেট অনুসারে যে ওষুধ আসে, এটা দুই-তিন মাসে শেষ হয়ে যায়। ওষুধের জন্য বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট আবেদন করা হলেও সংকট কাটছে না। প্রায় প্রতিটি ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এতে অনেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহ দেখায় না। এসব সংকটের সমাধানের জন্য আমাদের ওয়ার্ডে বাজেট বাড়ানো জরুরি। তা না হলে, এ ওয়ার্ডের অবস্থা আরও খারাপ হবে’।