ডেঙ্গু নিয়ে বিশদ গবেষণার প্রয়োজন আছে

ডেঙ্গু এখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে রোগীর মৃত্যু হলেও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ ‘শক সিনড্রোম’। গত দুই মাসে এ কারণে মারা গেছে ৪৬ শতাংশ রোগী। যা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গত ৮ মাসে যে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তার বেশিরভাগই শক সিনড্রোমে। শক সিনড্রোম মূলত একইসঙ্গে পালস ও রক্তচাপ কমে যাওয়া। এ জটিলতা দেখা দিলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গের কোষে যে অক্সিজেন দরকার সেই অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন: ব্রেন, হার্ট, কিডনি এগুলোতে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে না পারায় আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ‘শক সিনড্রোম’ হলে তাকে বাঁচানো কঠিন বলেও জানান একজন চিকিৎসক।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চারটি ধরনের যেকোনও একটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারাই মূলত শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হন বেশি। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত না হয়েও অনেকের শক সিনড্রোম হতে পারে।
এ সিনড্রোমে নারীরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হন, কারণ তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে যান। এ ছাড়া বাংলাদেশের নারীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা পুষ্টিহীনতাও রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছেন। সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যাওয়ার কারণেই শক সিনড্রোম হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত যেকোনো রোগীর এ সমস্যা তৈরি হতে পারে।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে দেড় লাখ থেকে চার লাখ প্লাটিলেট থাকে। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্লাটিলেট যখন ২০ হাজারের নিচে নেমে যাবে তখন রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তখনই নানা জায়গা থেকে রক্ত বের হয়ে আসে। এছাড়া এক্সপান্ডেট সিনড্রোম ডেঙ্গুর আরেকটি সমস্যা। ডেঙ্গুতে অনেক সময় মারাত্মক কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। এসব জটিলতায় সাধারণত লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এসব অঙ্গ যখন আক্রান্ত হয় তখন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ জটিলতাগুলোকে এক্সপান্ডেট ডেঙ্গু সিনড্রোম বলে।
আসলে ডেঙ্গু নিয়ে বিশদ কিছু বলার সময় আসেনি। কারণ এই রোগ, তার বিস্তার ও ব্যাপকতা নিয়ে এখনো কোনোধরনের গবেষণা হয়নি। তবে ভারতসহ কয়েকটি দেশে চেষ্টা চলছে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের। তবে তার আগে দরকার এই রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুহার কমানো। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদেরও।