টুংটাং শব্দে মুখর কামার পল্লী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামাররা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামাররা তৈরি করছেন দা, বঁটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। খবর বাংলানিউজের।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর ২টা। নগরীর ফিরিঙ্গি বাজারের কামার পল্লীতে আগুনে পুড়িয়ে পেটানো হচ্ছে দা, বঁটি, চাপাতি। কয়লার আগুনে লোহা গরম করে লাল টকটকে হলে হাতুড়ি পিটিয়ে পশু জবাই করার অস্ত্র তৈরি করতে ব্যস্ত কামারেরা। চারদিকে কেবলই লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ। কেউ টানছে হাঁপর, কেউবা দিচ্ছে শান।

নগরীর ফিরিঙ্গি বাজারের একটি দোকানে পরিবারের সবাই কোরবানির সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত। সেখানের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন দশম শ্রেণি পড়ুয়া সীমান্ত দাশ। বাবা উপন কুমার দাশ ও মা ববিতা রানী দাশকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করছেন ছেলে। কোরবানির ঈদে কাজের চাপ বেশি থাকায় সময় দিচ্ছে সে। প্রায় ৬০ বছর ধরে তার পরিবার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত।

শুধু সীমান্তই নয়, রয়েছে জয় দাশও। তিনি সম্পর্কে সীমান্তের জেঠাতো ভাই। সে-ও পরিবারকে সময় দিচ্ছে ঈদের ছুটিতে। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে পারিবারিক পেশায়।

সীমান্ত বলে, আমার ঠাকুরদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের।
করোনার কারণে গত দুই বছর আমাদের ব্যবসা তেমন জমে উঠেনি। এবছর কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে। এখন ঈদ এগিয়ে আসতে আসতে যদি বিক্রি কিছুটা বাড়ে, সেই লক্ষ্যেই থেমে না থেকে একের পর এক জিনিসপত্র তৈরি করছি।

কোরবানির ঈদ আর মাত্র তিন দিন বাকি। এ চার দিনেই কামারিদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর সংসার চালান। বছরের বেশিরভাগ সময় অল্প কাজ করে অল্প টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় কামারদের। তাই তারা এ সময়টা কাজে লাগান। যেন বাকি সময় নিশ্চিন্তে কাটাতে পারেন।

নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার কামার সঞ্জয় কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদে আমাদের রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এ সময় আমরা কিছু টাকা উপার্জন করি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়।

নিতাই কামার বলেন, সারা বছর কাজ কম থাকলেও ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায়। আর তাই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। অনেক কষ্টের পরেও এ পেশাটি ধরে রেখেছেন। কারণ এটি তাদের পৈত্রিক পেশা। কোরবানির সময়টাই আয়ের মৌসুম।

নগরীর জেল রোড সংলগ্ন লালদীঘি পাড়ে বাপ-বেটা মিলেই কামারের দোকান পরিচালনা করেন। বাপ লোহা ধরে আছেন ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি, বঁটি।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। বঁটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।

হরিপদ কামার বলেন, আগে যেখানে লোহার কেজি ছিল ৬০ টাকা সেটি এখন ১২০ টাকা। কয়লার বস্তা আগে ছিল ৯০০ টাকা, এখন সেটি ১২০০ টাকা। এছাড়া চায়না কয়লা ১৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই কোরবানির সরঞ্জামের দামও একটু বেশি নিচ্ছি।