চেম্বারে বসছেন না চিকিৎসকরা, দুর্ভোগে রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

শারমিন আক্তারের (ছদ্মনাম) ছেলে অসুস্থ। খবর নিয়ে যান ওআর নিজাম রোডস্থ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম হাসানের চেম্বারে। গিয়ে জানতে পারেন ঢাকার দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করায় বন্ধ রাখা হয়েঠে চিকিৎসকের চেম্বার। এরপর অসুস্থ শিশুকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন শারমিন। মেট্রো, ল্যাবএইড, এপিক ও শেভরনসহ নগরের বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে খোলা পাননি চেম্বার।

গতকাল সোমবার দুপুর তিনটা থেকে বিভিন্ন চেম্বারে ঘুরতে থাকা শারমিন এসব কথা জানান সুপ্রভাতের প্রতিবেদককে।

তিনি বলেন, ‘শুধু মেধাবী বলে কারো ডাক্তার হওয়া ঠিক না। মানবিক হতে না পারা মানুষগুলো ডাক্তার হচ্ছে বলে, তারা রাজনৈতিক নেতাদের মতো হরতাল করছে। আমরা সাধারণ মানুষরাতো নিরুপায় হয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। এরকম ক্রিটিক্যাল (সমস্যাপূর্ণ) সময়ে যদি কোনো ডাক্তারকে না পাই, এটা দুঃখজনক।’

গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগী ও তাদের স্বজনরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে ডাক্তারদের সাক্ষাতের সময় না পেয়ে আর হাসপাতালে আসেননি। ফলে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের ভিড়ের চিত্র পাল্টে গেছে। ফাঁকা পড়ে আছে রোগী ও স্বজনদের বসার সিটগুলো। আর ডাক্তার রুমের সামনে নেই এটেন্ডেন্ট। রুমগুলো সব বন্ধ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাব অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে চিকিৎসকরা চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবাগুলো চালু আছে। এক্সিডেন্ট, সিজারসহ যেসব রোগীর চিকিৎসা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন, তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। শুধু পূর্ব নির্ধারিত পরামর্শ ও অপারেশন সেবা দেওয়া হচ্ছে না।

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে আমরা রোগী দেখার কাজ বন্ধ রেখেছি। তবে রোগীদের জরুরি সমস্যাগুলো আমরা বিবেচনা করছি। এটা দৃশ্যত অমানবিক আচরণ মনে হলেও এটা প্রয়োজন। কেননা আমরা রোগীদের সেবা দিতে গেলে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে বলেন। ঢাকায় দুজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ দেওয়া মাত্র তাদের গ্রেফতার করা হলো। এমনটা কেন হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর সেটা তো তদন্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএমডিএস আছে। বিএমডিএসের সহযোগিতা নিয়ে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি তদন্ত করে যদি চিকিৎসকদের কোনো দোষ পাওয়া যেত, তখন তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কারো কিছু বলার ছিলো না। বিএমডিএসের আপত্তিতে অনেক সিনিয়র ও প্রখ্যাত ডাক্তার চেম্বার করতে পারেন না। এগুলো নিয়েতো আমরা কথা বলি না। এজন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনেই আমরা কর্মসূচি পালন করবো।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। সোমবার (১৭ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) পর্যন্ত। বিএমএর এ সিদ্ধান্তে একাত্মতা জানিয়েছে অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি), বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি ও বাংলাদেশ অটিজম অ্যান্ড ডিজএবিলিটি ইন্সটিটিউটের (বাডি) চট্টগ্রাম শাখা।