চাঁদা দিয়েও স্যুয়ারেজ লাইন পাচ্ছেন না চবির তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা!

চবি সংবাদদাতা »
৩০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়ার পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে স্যুয়ারেজ (পয়ঃনিস্কাশন) লাইন সংযোগ দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে সেন্ট্রাল হাউজিং সোসাইটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে গতকাল রোববার ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক ও কর্মকর্তারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
অভিযুক্ত দুই সদস্য হলেন সেন্ট্রাল হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ হাসান মিয়া।
ভুক্তভোগীরা হলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. এফ এম এনায়েত হোসেন, ইন্সটিটিউট অব এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ফরেস্ট্রির অধ্যাপক ড. নূরে আলম এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সৈয়দ মোসলেম উদ্দিন।জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক-কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পশ্চিম পট্টি মৌজায় জমি ক্রয় করে ভবন নির্মাণ করেন। যেটি সেন্ট্রাল হাউজিং সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত। ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই অভিযুক্ত হাসান মিয়া এবং নূর আহমদ বিভিন্নভাবে সোসাইটির সদস্য করার নামে চাঁদা দাবি করতে থাকেন। একপর্যায়ে সোসাইটির সদস্যপদ ও পয়ঃনিস্কাশন লাইনের জন্য ৩০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেন তারা। কিন্তু চাঁদা দিলেও সোসাইটি থেকে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন স্থাপন করতে দেয়া হয়নি তাদের।
ভুক্তভোগী অধ্যাপক ড. এফ এম এনায়েত হোসেন ও অধ্যাপক ড. নূরে আলম বলেন, আমরা যেহেতু ব্যাংক লোন গ্রহণ করে ভবনটি নির্মাণ করেছি সেহেতু আমাদের বিশাল আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে ২০২০ সালের মাঝামাঝি আমরা ৩ জন সে চাঁদার টাকা দিতে বাধ্য হই। কিন্তু চাঁদা দেয়ার পরে যখন নতুন বাসায় উঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন হাসান মিয়া এবং নূর আহমদ আমাদের ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন।
শিক্ষকরা বলেন, আমাদের ভবন সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও আমরা ভবনে উঠতে পারছিলাম না বরং অন্যত্র আমাদেরকে ভাড়া থাকতে হয়েছিল।
আমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে অনুরোধ করলেও তারা তাতে কোনোরূপ কর্ণপাত না করে ভবন প্রস্তুত হওয়ার দীর্ঘ ৮ মাস পরে অনৈতিকভবে আমাদেরকে এমন দিকে লাইন দিতে বাধ্য করে যেদিকে পানি নিষ্কাষণের কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেই।
তারা আরো বলেন, আমরা তাদের কথা মতো লাইন দিলে সে লাইনের সামনের দিক ১ মাসের মধ্যেই নষ্ট করে দেয়া হয় এবং পানি রাস্তার উপর দিয়ে গড়াতে থাকে। আমরা সে লাইন সংস্কার করেও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু, এ লাইনে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা নেই, তাই এ লাইনটি এখন সম্পুর্ণ বন্ধ অবস্থায় আছে এবং পানি রাস্তার উপর দিয়ে গড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা বিষয়টি অবগত করার উদ্দেশ্যে সোসাইটির কার্যনির্বাহী সদস্যদের সাক্ষাৎ করলে অন্য সদস্যদের সামনে হাসান মিয়া এবং নূর আহমদ আমাদের উপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে আমাদেরকে প্রাণ নাশের হুমকিও পর্যন্ত দেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত কে এম নূর আহমদ। তিনি বলেন, ওনারা (দুই শিক্ষক ও কর্মকর্তা) অদক্ষ কর্মী ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সুয়ারেজ লাইন স্থাপন করার ফলে ১৫ দিনের মধ্যে পাইপ ও চেম্বারের স্ল্যাব ভেঙে যায়। এখন রাস্তার উপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। ‘সুয়ারেজ লাইনের ব্যবস্থা করাতো সোসাইটির কাজ নয়। মালিকপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে কাজটি করবে যেভাবে পারবে।
চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে একটি কমিটি করে এ সোসাইটিটি পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের এলাকায় প্রবেশ করার যে রাস্তা আছে, তা কোনো সরকারি রাস্তা নয়। এটি আমাদের ক্রয়কৃত রাস্তা। তাই এই এলাকার সব বাসিন্দা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া এসব চাঁদার অর্থ সোসাইটির উন্নয়নের জন্য ব্যবহার হয়।
এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ও সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।