চমেক হাসপাতাল: জরুরি বিভাগে মিলছে না সেবা !

জরুরি বিভাগের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে অপেক্ষমান রোগীর স্বজনেরা-সুপ্রভাত

রুমন ভট্টাচার্য :
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। অথচ জরুরি বিভাগে সবার আগে জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সেই সেবা একেবারেই মিলছে না।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ জরুরি বিভাগে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিক সেবা না দিয়েই ভর্তির জন্য সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডে। এছাড়া টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ভর্তি করাতেও লাগছে বেশি সময়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসায় গাফিলতি মৃত্যু দিকে ঠেলে দেওয়ারই শামিল।
রোববার (৫ জুলাই) সরেজমিন দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ১০০২ নম্বর ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে একটি ট্রলি দিয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা। বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত রোগী ও স্বজনদের ভিড়। কক্ষটির ভিতরে একজন দাঁড়িয়ে রোগীদের টিকিট নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভেতরে সুরক্ষাসামগ্রী পরিহিত কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বজনের কাছ থেকে রোগীর সমস্যার কথা শুনে সরাসরি ভর্তির জন্য পাঠাচ্ছেন ওয়ার্ডে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসককে বাইরে কিংবা ভিতরে রোগীদের কাউকে সরাসরি সেবা দিতে চোখে পড়েনি।
এদিকে, জরুরি বিভাগের বাইরে টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে দেখা গেছে। তবে ছিল না সামাজিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আঁকা সাদা গোলবৃত্তগুলো মুছে গেছে। কোভিড ও ননকোভিড প্রায় সব রোগীর টিকিট একই কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে। পাশে একটি কোভিড কাউন্টার করা হলেও সেটি এখন চালু করা যায়নি।
ফটিকছড়ির নারায়ণহাট থেকে মো. রাহাত ইসলাম অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে। তিনি জানান, ‘প্রথম ১০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে জরুরি বিভাগে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসককে রুমের বাইরে দাঁড়িযে সন্তানের অসুখের কথা বলি। তিনি শুনে সরাসরি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন ভর্তির জন্য। ডাক্তার এসে একটু দেখলে মনকে সান্ত¦না দিতে পারতাম।’
এ ধরনের অভিযোগ শুধু মো. রাহাত ইসলাম এর নয়। জরুরি বিভাগে আসা প্রায় সব রোগী ও স্বজনদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, যেসব রোগী দেখা দরকার তাদের অবশ্যই দেখা হচ্ছে। তবে জরুরি বিভাগের আসা বেশিরভাগ রোগীকে পাঠানো হয় ওয়ার্ডে।
সাতকানিয়া থেকে মামাশশুরকে নিয়ে আসা মো. ইকবাল বলেন, ‘টিকিট নিয়ে জরুরি বিভাগে গেলাম। বাইরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। পরে একজন টিকিট নিয়ে ভিতরে দিলেন। কিন্তু রোগীকে কেউ না দেখে শুধুমাত্র সমস্যার কথা শুনে ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য লিখে দিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা এখানে মিলছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আফতাবুল ইসলাম সুপ্রভাকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগের যেসব রোগী অবশ্যই দেখা দরকার তাদের দেখা হয়। যেমন একটি রোগী যদি সামান্য সিমটম নিয়ে আসে তাহলে ডাক্তার শুনেই দিতে পারে। আর যাদের দেখা দরকার তাদের দেখতেই হয়। তবে জরুরি বিভাগে আসাদের বেশিরভাগ রোগীদের ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হয়।’ হাসপাতালে দুর্ঘটনা, বিষপান, ডেলিভারি ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে বেশিরভাগ রোগী আসেন বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী রানা বিশ্বাস বলেন, ‘টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় আধঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। অনেক সময় ট্রলি ও হুইল চেয়ার আসায় অপেক্ষায় থাকতে হয়। এ সময়ের মধ্যে রোগীর অবস্থা আরো খারাপের দিকে চলে যায়।’ এক্ষেত্রে সেবার গতি আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান তিনি।