চট্টগ্রামে করোনা রোগীর চাপ কমেছে

জেনারেল হাসপাতালে খালি বেড
আক্রান্তের হার কমে ১৩ শতাংশে : সিভিল সার্জন
করোনা এখন অন্যান্য রোগের মতো একটি স্বাভাবিক রোগ : ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া
মাস্কের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শঙ্কা বাড়তেও পারে : বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক

 

ভূঁইয়া নজরুল

চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল করা  ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়ার হাসপাতালে এখন একজন করোনা রোগীও নেই। কোরবানির ঈদের পর হাতে গোনা কয়েকজন রোগী থাকলেও এখন একেবারেই শূন্য। শুধু ফিল্ড হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় প্রধানতম ভরসার স্থল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কিংবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও রোগী অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনা আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে নেই রোগীর চাপ। তাহলে কি চট্টগ্রাম করোনামুক্ত হয়ে গেছে?

এই প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন,‘ চট্টগ্রাম এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। আগামী ১৫ দিন পর্যবেক্ষণের পর বলা যাবে আমরা কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রয়েছি। তবে এখন আক্রান্তের যে হার রয়েছে তা থেকে অর্ধেকে নেমে আসতে হবে।’

ঈদের আগে বলেছিলেন, ঈদের পর দুই সপ্তাহ খুব ঝুঁকিপূর্ন। এখন আরো ১৫ দিনের কথা বলছেন।  এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ ঈদের পর যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে নতুন কেউ সংক্রমিত হতে সময় লাগবে। সেই হিসেবে আরো ১৫ দিনের কথা বলছি। তবে একথা সত্য আমরা এখনো শঙ্কার বাইরে নেই।’

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে মুখে মাস্ক ছাড়া ঘুরাফেরা করছে এবং মানুষের অবাধ চলাচল করোনার শঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

একই শঙ্কার কথা জানান ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন,‘এখন হয়তো নমুনা কম, তাই পরীক্ষাও কম হচ্ছে। কিন্তু অনেক মানুষ পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাই এখনই শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। জীবনযাত্রায় একটু ঢিলেমি দিলেই আবারো তা ঝেঁকে বসতে পারে।’

এই ঢিলেমির কারণে করোনা ঝুঁকি বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি আরো বলেন,‘ ঢিলেমি দেয়ার পর ইউরোপ আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। তাই আমাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।’

করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামের প্রথম বিশেষায়িত হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতালে একসময়  অনেক রোগীর চাপ ছিল। ১১০টি শয্যার সবগুলো ছিল পরিপূর্ণ। কিন্তু এখন মাত্র ৫৫ জন রোগী রয়েছে। এবিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন,‘ এখন করোনা রোগীর চাপ অনেক কমে এসেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো তা আরো কমে আসবে। তবে আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে হবে।’

একইচিত্র চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। হাসপাতালটিতে একসময় প্রচুর রোগীর চাপ থাকলেও ২০০ শয্যার মধ্যে রোগী রয়েছে ১০০। এবিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম হুমায়ুন কবির বলেন,‘রোগীর চাপ কমেছে এটা সত্য, তবে আবারো করোনার ধাক্কা আসতে পারে তাই আমরা সতর্ক রয়েছি।’

করোনা এখন অন্য রোগের মতো একটি স্বাভাবিক রোগ

গতকাল চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে ১৪ আগস্ট ১৩.৪০%, ১৩ আগস্ট ১৩.১২%, ১২ আগস্ট ৮.৮৫%, ১১ আগস্ট ১৮.০৬%, ১০ আগস্ট ১৭.০৫%। কিন্তু গত মাসে এই হার ছিল ২০ শতাংশের উপরে এবং জুন মাসে ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। তাহলে কি এখন আর করোনা নেই? এ বিষয়ে ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া বলেন,‘ করোনাকে এখন মানুষ ডায়াবেটিস, কিডনিসহ অন্যান্য রোগের মতো আরো একটি সাধারণ রোগ হিসেবেই বিবেচনা করছে। মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এসেছে। একইসাথে করোনাকেও মোকাবেলাও করছে। এটা অবশ্যই একটি পজিটিভ দিক।’

করোনা পরিস্থিতি এখন স্বস্তিদায়ক

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, চট্টগ্রামে এখন করোনা আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশ এবং মৃত্যুহার দেড় শতাংশ। তাই এখন চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। তবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় তা যেকোনো সময় আবারো বাড়তে পারে।

রোগী বাড়ার শঙ্কার বিষয়টি জানান করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান। তিনি বলেন,‘ ঈদের পর আমাদের রোগীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন আমাদের এখানে ২১ জন রোগী রয়েছে। গত শনিবারও পাঁচজনকে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়া আইসোলেশন সেন্টারের বহি:বিভাগ থেকে মানুষ বিভিন্ন সার্ভিসও নিচ্ছে। তাই হয়তো আগামীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তেও পারে।‘

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম করোনা রোগী সংক্রমিত হয়েছিল ৩ এপ্রিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপর্যন্ত ১৫ হাজার ৮০৯ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন এবং এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৫১ জন। এছাড়া এপর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৫২১ জন।