গড়া সেঞ্চুরির পর ম্যাচ গড়াল শেষ দিনে

জাকিরের রেকর্ড

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছিলেন জাকির হাসান। তার দিকে এগিয়ে গিয়ে করমর্দন করলেন রাহুল দ্রাবিড়। ভারতের কোচ ও ব্যাটিং কিংবদন্তির কাছ থেকে পাওয়া শুভেচ্ছা নিশ্চিতভাবেই হতে পারে এই তরুণ ব্যাটসম্যানের সামনে চলার প্রেরণা। গোটা দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তিও জাকিরকে ঘিরেই। অভিষেক টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার পাওয়া গেল অবশেষে। তার শতরানের পথ ধরেই ম্যাচ পড়াল পঞ্চম দিনে।

জয় এখনও ২৪১ রান দূরে। লক্ষ্যটা বাংলাদেশের দৃষ্টিমীমার অনেক বাইরে। ৪ উইকেট সঙ্গে নিয়ে সাকিব আল হাসানরা শেষ দিন শুরু করবেন নিশ্চিত পরাজয়ের অপেক্ষাতেই। তবু একটু সান্ত¡না, চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ দিনে নিতে পারল বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।

২২ বছর টেস্ট ক্রিকেটে কাটিয়ে দেওয়ার পর ঘরের মাঠের টেস্ট পঞ্চম দিনে নিতে পারাটা প্রাপ্তি বলা যায় কি না, সেই প্রশ্ন অবশ্যই তোলা যায়। তবে দিনের শুরুটা যে বাস্তবতায় ছিল, তাতে শেষটায় এই স্বস্তিটুকুই সঙ্গী। ম্যাচ তো শেষ দিনে গেল!

সেই কৃতিত্ব মূলত জাকিরের। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দিয়ে, ‘এ’ দলে দুর্দান্ত খেলে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান স্মরণীয় করে রাখলেন টেস্ট অভিষেক।

টেস্ট শুরুর আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, জাকিরের ব্যাটে তিনি তামিম ইকবালের ছায়া দেখতে পান। সেই জাকির ছাড়িয়ে গেলেন অভিষেকে তামিমের ৮৪ রানের ইনিংস, পেরিয়ে গেলেন জাভেদ ওমর বেলিমের ৮৫ রানের রেকর্ড। দেশকে উপহার দিলেন অভিষেকে ওপেনিংয়ে প্রথম। সেটিও চতুর্থ ইনিংসে, যেখানে ব্যাটিং সবসময়ই কঠিন।

১৪৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান জাকির। সেই ১৯৭৫ সালে এই কীর্তি গড়তে পেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিওনার্ড বাইচান।

শুধু জাকিরের সেঞ্চুরিই নয়, দিনটা কাটিয়ে দেওয়ার পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তার উদ্বোধনী জুটিও। ১২৪ রানের সেই জুটিও রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে আগের ১১ টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি ছিল স্রেফ ৫৩ রানের, ভাবা যায়!
শান্ত ও জাকিরের জুটি আগের দিন বিকেলেই লড়াইয়ের ইঙ্গিতটা দেন। চ্যালেঞ্জিং ১২ ওভার তারা কাটিয়ে দেন নিরাপদে। নতুন দিনেও তারা এগিয়ে যান আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে। ভারতীয় বোলারদের সব প্রচেষ্টা সামলে তারা প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন কোনো উইকেট না হারিয়েই।

জুটিতে বেশি অগ্রণী ছিলেন শান্ত। দিনের শুরুর দিকে মোহাম্মদ সিরাজের বলে স্ট্রেট ড্রাইভ ও ফ্লিকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে ছুটতে শুরু করেন তিনি। তার জন্য পরে শর্ট বলের কৌশল নেন সিরাজ। কিন্তু শান্ত জবাব দেন দুর্দান্ত কিছু পুল শটে।

অফ স্টাম্পের বাইরে তিনি একটু নড়বড়ে বরাবরই। ভারতীয় বোলাররা সেই চ্যানেলে বল করে তার পরীক্ষা নেন। শান্ত এ দিন ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ফাঁদে পা দেননি একদমই। আরেকপ্রান্তে জাকিরও সময়ের সঙ্গে সাবলিল হয়ে উঠতে থাকেন। দুই ব্যাটসম্যানেরই পায়ের কাজ এ দিন ছিল দারুণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা ছিলেন প্রায় নিখুঁত।

স্পিন আক্রমণে আসার পরও দুই ব্যাটসম্যানের জন্য নানা কৌশলে মাঠ সাজিয়ে বোলিং করতে থাকে ভারত। কিন্তু কাজ হয়নি তাতেও। শান্ত একবার অবশ্য একটি রিভার্স সুইপের চেষ্টা করেছিলেন, পরে আবার সামলে নেন নিজেকে। চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো শতরানের উদ্বোধনী জুটি পায় বাংলাদেশ।

লাঞ্চের পরপর মুহূর্তের ভুলে উইকেট হারি বসেন শান্ত। উমেশ যাদবের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা মেরে বসেন তিনি। স্লিপে বিরাট কোহলির হাত থেকে বল ফসকে গেলেও কিপার রিশাভ পান্ত তা গ্লাভসে জমিয়ে ফেলেন। ১৫৬ বলে ৬৭ করে থামে শান্তর ইনিংস।

এরপর আর বড় জুটি পায়নি বাংলাদেশ। তিনে নেমে ইয়াসির আলি চৌধুরি সুযোগ হারান আকসার প্যাটেলের টার্ন সামলাতে না পেরে।
লিটন দাস এ দিন শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। পঞ্চাশের বেশি বল খেলেও ছন্দ পাচ্ছিলেন না একটুও। অস্বস্তিকর উপস্থিতি শেষে ১৯ রান করে তিনি উইকেট বিলিয়ে দেন চা বিরতির মিনিট দশেক আগে।

এরপর মুশফিকের সঙ্গে জাকিরের জুটি জমে ওঠার আভাস ছিল। চার বিরতির পরপর ৮৭ থেকে কুলদিপ যাদবের বলে ছক্কায় সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান জাকির। পরের ওভারে আকসার প্যাটেলের বলে বাউন্ডারিতে পৌঁছে যান জাদুকরি তিন অঙ্কে।

উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে ওঠেন ক্রিজে। অভিনন্দন পান ভারতীয়দের কাছ থেকেও। কিন্তু একটু পরই ওই চেহারায় নেমে আসে আধাঁর। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ব্যাট-প্যাড ক্যাচ হয়ে ২২৪ বলে জাকির থামেন ঠিক ১০০ রানেই।

সাকিব উইকেটে যাওয়ার পরই চার-ছক্কা মারেন আকসারকে। তবে দ্বিতীয় নতুন বল হাতে নিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন আকসার।

উমেশ যাদবের বলে পান্তের হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া মুশফিক বোল্ড হয়ে যান আকসারের জোরের ওপর করা দারুণ এক টার্নিং বলে। তবে সামনের বল পেছনের পায়ে খেলার ভুলের দায় দেওয়াই যায় অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে।

ওই ওভারে আকসার ফিরিয়ে দেন নুরুল হাসান সোহানকেও। ম্যাচ তখন শেষ দিনে গড়ানো নিয়ে শঙ্কায় প্রবলভাবেই। সাকিবও ছটফট করছিলেন ক্রিজে। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে একটু সাবধানী হয়ে ওঠেন। মেহেদী হাসান মিরাজও নির্ভরতা যোগান তাকে। দুই ব্যাটসম্যান মিলে নিরাপদে কাটিয়ে দেন ১৪ ওভার। শেষ দিনের পরিণতিটা অনুমেয়ই। দেখার কেবল, সাকিব-মিরাজ-তাইজুলরা লড়াই কতক্ষণ করতে পারেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪০৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫০
ভারত ২য় ইনিংস: ২৫৮/২ (ডি.)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫১৩, আগের দিন ৪২/০) ১০২ ওভারে ২৭২/৬ (শান্ত ৬৭, জাকির ১০০, ইয়াসির ৫, লিটন ১৯, মুশফিক ২৩, সাকিব ৪০*, সোহান ৩, মিরাজ ৯*; সিরাজ ১৫-৩-৪৬-০, উমেশ ১৫-৩-২৭-১, অশ্বিন ২৭-৩-৭৫-১, আকসার ২৭-১০-৫০-৩, কুলদিপ ১৮-২-৬৯-১)।