খালের মাটি অপসারণ ২৫ মে’র মধ্যে

জলাবদ্ধতা

এবার বর্ষায়ও চলবে কাজ : প্রকল্প পরিচালক

ভূঁইয়া নজরুল »

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নিচে চান্দগাঁওগামী সড়কে কালভার্টের মুখ থেকে মাটি তোলা হচ্ছিল গতকাল বুধবার দুুপুরে। স্কেভেটর দিয়ে শুধু কালভার্টের মুখ থেকে ১৫ ড্রাম ট্রাক মাটি উঠানো হয়েছে। শুধু একটি কালভার্টের মুখ থেকেই যদি এতো মাটি তোলা হয় তাহলে নগরীর ৫৭টি খালে কি পরিমাণ মাটি জমা রয়েছে?
নগরীর খালগুলোতে মাটি অনেক জমা রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে খালের মধ্যে মাটি জমলেও অনেক খাল ইচ্ছাকৃতভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে উভয় পাশে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের জন্য। কিন্তু এখনো রিটেনিং দেয়াল নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় খালগুলো মাটিতে জমা রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ শেষ হলেও খালের মাটি সরানো হয়নি। গত বছর খালের মাটি না সরানোর কারণে প্রাক বর্ষার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। এবারো কি এমন হবে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল নগরীর অধিকাংশ খালপাড় ঘুরে দেখা যায়, এখনো খালের মধ্যে মাটি রয়েছে। সিডিএ এভিনিউ রোডের চশমা খাল মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কারখানা পর্যন্ত পানি চলাচলের উপযোগী নেই। অধিকাংশ জায়গা ব্লক অবস্থায় রয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই খালের মাটি অপসারণ করা হবে বলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনী তা জানায়। অপরদিকে রাজাখালী-২ খালেও একই অবস্থা। পুরো খাল প্রায় ব্লকেজ অবস্থায় রয়েছে। খাল দিয়ে পানি অপসারণের কোনো রাস্তা নেই। রাজাখালী-৩ খালের অর্ধেক পরিষ্কার করা হলেও বাকি অংশে মাটি ভরাট রয়েছে।

গতকাল দুপুরে দেখা যায়, স্কেভেটর দিয়ে সেই অংশ থেকে মাটি উঠানোর কাজ চলছে। এছাড়া বাকলিয়া খাল, বির্জা খাল, রাজাখালী খাল-১ ভাংগার পুল হয়ে রাহাত্তার পুল হয়ে ফুলতলা পর্যন্ত, চাকতাই খালের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স থেকে ফুলতলা পর্যন্ত, হিজরা খালের গোল পাহাড় থেকে গণপূর্ত কলোনি পর্যন্ত, বদরখালী খালের লালদীঘির পাড় থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত, মির্জা খালের মোহাম্মদপুর ব্রিজ থেকে শমসের পাড়া পর্যন্ত, ডোমখালী খালের বহদ্দারহাট থেকে হামিদচর পর্যন্ত, মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা ও টেকপাড়া খাল পরিষ্কার করা হয়েছে।

নগরজুড়ে ৩৬টি খালে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এসব খাল ছাড়াও অনেক ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু বাকি খালগুলোর মাটি কবে নাগাদ উত্তোলন করা হবে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘আগামী ২৫ মে’র মধ্যে সব খালের মাটি অপসারণ করে পানি চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হবে। তবে কিছু কিছু খালে মাটি থাকবে এবং প্রকল্পের কার্যক্রমও চলমান থাকবে।’

প্রতিবছর বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। তখন অন্যান্য কাজ করা হয়। এবার বর্ষার আগে বৃষ্টির পরিমাণও বেশি দেখা যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ সীমিত হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এবছর কাজ পুরোদমে বন্ধ হচ্ছে না জানিয়ে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এবছর আমরা পুরোদমে কাজ বন্ধ রাখবো না। অনেক খালে আমাদের কাজ চলমান থাকবে। তবে সেসব কাজের জন্য কোথাও পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হবে না। আমরা সেভাবেই কাজ করবো।’

এদিকে এবারো সব খালের মুখে স্লুইস গেট বসছে না। তাহলে পানি আটকে থাকার শঙ্কা রয়েছে- এ ব্যাপারে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এবার খালের মুখগুলো খুলে দেয়া হবে। কয়েকটি খালের মুখে স্লইস গেট বসানো হয়েছে এবং যেসব খালে বসেনি সেগুলোতে পানি আটকে খাকবে না।’
একই মন্তব্য করেন জলাবদ্ধতা নিরসনের অপর প্রকল্পের (চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ) পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের আওতায় ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার সরাসরি পানি নদীতে নেমে যেতে পারবে।’

উল্লেখ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর সেনাবাহিনীর পরামর্শক নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। আর তা করতেই দুই বছর চলে যায়। এসময়ের মধ্যে শুধু খালগুলো পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার পর একবছর বর্ধিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করে প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা করা হয়েছে।