ক্ষমা চাইলেন হাসান মতিউর রহমান

হিরো আলমের জন্য গান

সুপ্রভাত ডেস্ক »

হিরো আলমের জন্য গান লিখে তিন দিন আগেই সামাজিকমাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছিলেন দেশের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান। হিরো আলমের জন্য গান লেখার কথা জানিয়ে নিজের ফেসবুকে করা সেই পোস্টটিও পরে ডিলিট করে দেন এই গীতিকার-সুরকার। তবে এবার ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন হাসান মতিউর রহমান।

তিনি লেখেন, ‘আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, চেয়েছি গান যখন গাইতে চায়, চেষ্টা করে দেখি, শিখিয়ে ভালো কিছু আদায় করা যায় কি না। সেদিন গানের গাইড ভয়েস নিয়ে সবার সামনে আমি তাকে বলে দিয়েছি, একজন তবলাবাদক রেখে, একজন গানের শিক্ষকের কাছে মন দিয়ে দুই মাস শিখতে হবে। তা না হলে কিন্তু গান হবে না। ছেলেটা কিন্তু খুব নরম। সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। বলল, ‘ওস্তাদ আমি শিখব। আপনি চিন্তা করবেন না’।’

হাসান মতি জানান, ‘এরপর আমি নিজেই ছবিসহ পোস্ট দিই সরল মনে। ভেবেছিলাম, সবাই ভালোভাবে নেবে এবং এ রকম একটি দুঃসাহসিক কাজের জন্য আমাকে উৎসাহিত করবেন। কিন্তু দেখা গেল, অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সাথে সাথে সবাইকে সম্মান জানিয়ে আমার আইডি থেকে পোস্টটি ডিলিট করে দিই।’ ফেসবুক থেকে পোস্টটি সরিয়ে নিলেও অনেকে সেটির স্ক্রিনশট রেখে দিয়ে তাকে হেয় করছেন জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমাকে অসম্মান করার জন্য স্ক্রিনশট রেখে ছড়িয়ে দেয়। স্টুডিওতে গোপনে কেউ মোবাইলে ধারণ করে ছেড়ে দেয়। হিরো আলমের সাথে যারা এসেছিল হয় তারা, না হয় যে কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভিডিও করে আমাদের সবার কাছে হেয় করেছে।’

হাসান মতিউর রহমান আরও লেখেন, ‘রেকর্ডিংয়ের সময় আমরা একটু মজা করেই থাকি। তবে তা কখনো কেউ জানতে পারে না। একান্তই গোপন। যা হোক, আমি বুঝতে পেরেছি, দেশের গান পিপাসুরা আমাকে কত ভালোবাসেন। যাঁরা মন্দ বলেছেন, তাঁরা ভালোবাসেন বলেই বলেছেন। আমি সবকিছু মাথা পেতে নিচ্ছি। বিশ্বাস রাখবেন আমার ওপর। এমন কিছু করব না, যাতে আমার জন্য সংগীতের কোনো ক্ষতি হয়। জীবন কাটিয়েছি গান নিয়ে, পেছনে গেছে অনেক দিন। সামনে আর কত দিন কাজ করতে পারব, আল্লাহ জানেন। তবে যত দিন আছি, আমি আপনাদের সাথেই থাকব, ইনশা আল্লাহ। যাঁরা আমার এ সিদ্ধান্তে কষ্ট পেয়েছেন, তাঁরা আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদেরই ভাই, বন্ধু, আঙ্কেল। সব সময় পাশে ছিলাম, পাশে থাকব। আমি খারাপ কিছু করব না, করতে পারি না। চলার পথে সবাই বন্ধু নয়, কিছু বৈরী মানুষও থাকে। কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও থাকে। খুবই দুঃখজনক। তারাও সুযোগ পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে স্বার্থ উদ্ধারে। কাউকে যদি অজান্তে দুঃখ দিয়ে থাকি, মনে রাখবেন না। সব ভুলে যাবেন। সবাই মিলেমিশে থাকাটাই জরুরি।’

তারা কথায়, ‘এরপর আর কেউ বিষয়টি নিয়ে কোনো খারাপ মন্তব্য করবেন না। ক্ষমা করে দেবেন। আসুন, সবাই মিলে আমাদের বাংলা গানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিই।’

হাসান মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘বহুজনকে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে গান করার সুযোগ করে দিয়েছি। সীমিত সাধ্য নিয়ে এ চেষ্টা আমার অব্যাহত থাকবে। সত্যি এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। একটি আবেদন, মন্দকে দূরে তাড়িয়ে না দিয়ে, আসুন, সে যাতে ভালো হয়, সে চেষ্টা করি। কার ভেতরে কী আছে, কেউ জানি না। আমরা সবাই এমন একটি জায়গা থেকেই উঠে এসেছি। মায়ের পেট থেকে কেউ শিখে আসিনি। বহু বাধা পেরিয়ে এখানে এসেছি। সুযোগ পেয়ে আমরা কি চলছি না! অনুরোধ রইল, আপনি না পারলে করবেন না, যারা পারে, তাদের কিছু করতে দিয়েন। আল্লাহ সবাইকে এক রকম মেধা দিয়ে পাঠান না। ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠান কখনো এক নয়। সবাই ভালো থাকবেন। সুন্দর থাকবেন। আপনারা কষ্ট পাবেন, এমন কাজ করব না।’

উল্লেখ্য, হাসান মতিউর রহমান প্রায় দুই হাজার গানের কথা লিখেছেন। তার লেখা জনপ্রিয় গানগুলো মধ্যে রয়েছে ‘কলমে নাই কালি’, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা’, ‘দেখা আরিচা ঘাটে শাহজালাল ফেরিতে’, ‘এবার না আসিলে বাড়িতে’ ইত্যাদি। অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনা সুরেরও স্বত্বাধিকারী তিনি।