কর্ণফুলী সংলগ্ন ২ সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে

নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক »

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন দুই সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা সরাতে দুই শতাধিক সাম্পান নিয়ে চাক্তাই খালের মোহনায় অনশন ধর্মঘট করবে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ পাঁচ সংগঠন। ১৫ দিনের মধ্যে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে এই দাবি বাস্তবায়ন না করলে তারা আগামীতে আরো কঠোর আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার কথা বলেন।

গতকাল ৭ নভেম্বর নগরীর সদরঘাট এলাকায় মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন। বাংলাদেশ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে দু’দিনের আন্দোলন কর্মসূচির প্রথমদিনে এই মানববন্ধন পালিত হয়।

এতে ভূমিদস্যুরা দখল করে কর্ণফুলীকে পঙ্গু করেছে বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, কর্ণফুলী জীবন্ত সত্তা হিসাবে স্বমহিমায় প্রবাহিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

দেশের প্রচলিত আইনও তাই বলে। কিন্তু প্রশাসনের দেখেও না দেখা নীতির কারণে ভূমিদস্যুরা দখল করে কর্ণফুলীকে পঙ্গু করেছে। চট্টগ্রাম নগরীর সত্তর লক্ষ মানুষের বর্জ্য ও পলিথিনের দূষণে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কর্ণফুলীর। যে কারণে দেশের অন্যতম খর¯্রােতা এই নদী এখন মাছ ও জলজপ্রাণী শূন্য হয়ে পড়েছে। দেশের ৯২ শতাংশ অর্থনীতি সচল রাখা নদীর এই অবস্থা জনগণ কিছুতেই মেনে নেবে না। আদালতের নির্দেশনা মেনে এগিয়ে না আসলে জনগণ আপনাদের বাধ্য করবে।

জনগণের কথা না শুনলে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের রাস্তায় আমাদের সাথে আন্দোলন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা কোথাও কর্ণফুলী রক্ষার কথা বলেন না। জনগণের কথা না শুনলে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে উচ্ছেদ করা নদীর জমি পুনরায় দখল করে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আড়াইশতাধিক বনজ ও ওষুধি বৃক্ষ রক্ষা করা না হলে এভাবেই বারবার নদী এবং নদী তীর দখল হতে থাকবে। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নদীর উভয় তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীকে ২০০০ সালের পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

নদী ও খাল রক্সা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য দিলরুবা খানমের সাঞ্চলনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ সংগঠক নেছার আহমেদ খান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সিনিয়র সহসভাপতি জাফর আহমদ, সহসভাপতি লোকমান দয়াল, সদস্য মিজানুর রহমান, সংগঠক আরমান হায়দার, সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলী তীরের ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এই রায় নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। হালদা মোহনা থেকে কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত ষোল কিলোমিটার এলাকায় তিন হাজারের অধিক অবৈধ দখলদার কর্ণফুলী নদী দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাবাদীরা এই দখলের সাথে জড়িত। এই অসাধু চক্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী তার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ হারাবে।