এবারের চ্যাম্পিয়ন চকরিয়ার জীবন

বলীখেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

রেফারি চ্যাম্পিয়নের হাত উচিয়ে ধরতেই দর্শনার্থীরা সেই চির চেনা উল্লাসে ফেটে পড়ে। ১১০তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীকে হারিয়ে ১১৩তম আসরে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেন তারিকুল ইসলাম তারেক জীবন বলী।

গতকাল সোমবার নগরীর লালদীঘি বলীখেলার আয়োজনে দেখা গেছে এমন চিত্র। এবারের আসরে ৩২ বছর ধরে রেফারির দায়িত্ব পালন করা আব্দুল মালেকই এ দায়িত্ব পালন করেন।
করোনার প্রকোপে গেল দু’বছর বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। দু’বছর পেরিয়ে এবার বলীখেলার ১১৩তম আসর বসেছে জেলা পরিষদ চত্বরের রাস্তায়। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ২০ ফুট প্রস্থের সুউচ্চ মঞ্চ বালু দিয়ে সাজানো হয়েছে। একদিকে জেল গেট থেকে অন্যদিকে ডিবি হেড কোয়ার্টার, জহুর হকার্স মার্কেট অন্য রাস্তার সোনালী ব্যাংকের মোড় থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল বলীখেলার মঞ্চ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর গড়াতেই মঞ্চ ঘিরে বলীখেলা দেখতে আসা দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে। অন্যান্য আসরের মতই দর্শকের উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জমে উঠে বলীর আসর। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বলীরা মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন। দুুপুর তিনটা থেকে শুরু হয় প্রথম রাউন্ডের খেলা। এ আসরে মোট ৭২ জন বলী অংশগ্রহণ করেন।

প্রথম রাউন্ডের খেলা শেষে শুরু হয় চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড বা কোয়ার্টার ফাইনাল। এতে অংশ নেন আটজন প্রতিযোগী। তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সেমিফাইনালে উঠেন জীবন, শাহজালাল, মোমিন ও সৃজন চাকমা বলী। সেমিফাইনালে খেলা হয় জীবনের সঙ্গে মোমিনের অন্যদিকে শাহজালালের সঙ্গে খেলা হয় সৃজনের। সে খেলায় একদিকে জীবন অন্যদিকে শাহজালাল বলী ফাইনাল খেলার জন্য নির্বাচিত হন।
১৯ মিনিট খেলা চলার পর প্রধান রেফারি আব্দুল মালেক ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবনকে জয়ী ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তখন শাহজালাল এর বিরোধিতা করেন। দর্শকরাও এ রায় মেনে না নিয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। তখন আয়োজকদের পক্ষ থেকে পাঁচ মিনিট সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় জয়-পরাজয় নিশ্চিত করতে।
ওই পাঁচ মিনিটেও জয় নিশ্চিত না হওয়ায় আয়োজকরা বিচারের ভার দেন প্রধান অতিথি ও মেয়র এম রেজাউল করিমের কাছে। মেয়র ওই সময় বিচারকদের সাথে আলোচনা করে আরও তিন মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন।
ওই তিন মিনিটেও কেউ যখন প্রতিপক্ষের পিঠ মাটিতে ছোঁয়াতে পারল না, রেফারি ৩:০ পয়েন্টের ব্যবধানে জীবন বলীকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।

এদিকে তৃতীয়স্থান নির্ধারণী খেলা খেলতে তিন পার্বত্য জেলার ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন সৃজন অপারগতা স্বীকার করেন। যার ফলে মোমিনকে তৃতীয় ও সৃজনকে চতুর্থ প্রতিযোগী নির্ধারণ করা হয়। এ সময় সৃজনের অপারগতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘জব্বারের বলীখেলায় প্রথমবার অংশগ্রহণ করেছি। শাহজালাল বলীর সঙ্গে সেমিফাইনালে লড়েছি। এতে তার পিঠ মাটিতে ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রেফারি বলেন পুরো পিঠ লাগাতে হবে। রেফারির এমন আচরণে কষ্ট পেয়ে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলাম। যার কারণে আমি তৃতীয়স্থান নির্ধারণী খেলায় অংশগ্রহণ করিনি। এসব কারণে পরবর্তীবার বলীখেলায় আসার আগ্রহ হারিয়েছি।’
১১৩তম আসরের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী বলেন, ‘আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। তাছাড়া আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গত ১০৯ আসরে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম, ১১০ আসরে রানার্সআপ আবার এবারও চ্যাম্পিয়ন। সর্বপ্রথম চকরিয়ার চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।’
দুপুরে খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। আর ফাইনাল শেষে বিজয়ীদের মাঝে কাপ ও প্রাইজমানি তুলে দেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।