অবশেষে ভাসানচরে সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জাতিসংঘের পর এবার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের গড়ে তোলা আশ্রয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা নিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। খবর বিডিনিউজের।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়ে অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা জানাতে পেরে খুশি যে, সবচেয়ে বড় সহযোগিতাকারী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছে, এখন থেকে ভাসানচরে তারা সহায়তা দেবে। কানাডা জানিয়েছে, তারা ভাসানচরে সহযোগিতা দেবে।’

শুরুতে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করলেও সেই অবস্থান বদলে সম্প্রতি ভাসানচরে শরণার্থীদের জন্য কাজ শুরু করতে সম্মত হয় জাতিসংঘ। এ বিষয়ে গতবছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে ইউএনএইচসিআর।

এরপর চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) ভাসানচরকে যুক্ত করা হয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সবচেয়ে বড় দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র এতদিন দূরেই ছিল।

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সহায়তা কার্যক্রমে ১৭০ কোটি ডলার দিয়েছে, যা একক দেশ হিসাবে সর্বোচ্চ।

২০২১ সালের জেআরপির অধীনে আসা ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের মধ্যে ২৯ কোটি ৮১ লাখ ডলারই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া, যা মোট অংকের প্রায় ৪৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, গত বছর জেআরপির অধীনে রোহিঙ্গাদের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ ডলার দিয়েছে কানাডা। ২০২০ সালে দেশটি দিয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ভাসানচরে যুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে সাধুবাদ জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভাসানচরে জাতিসংঘের, বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) যে কার্যক্রম, যেটা শুরু হয়নি সেখানে; বাংলাদেশের ওপর একভাবে চাপ পড়ছিল ভাসানচরের জন্য। সেটা অনেকংশে লাঘব হবে এই নতুন সহযোগিতা নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে।’

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। ২০১৭ সালে তার সঙ্গে যোগ হয় আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার সহাতায় জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছিল। তবে কক্সবাজারের উপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার যখন রোহিঙ্গাদের একাংশকে নোয়াখালীর জনবিরল দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তাতে শুরুতে বিরোধিতা করে বিশ্ব সংস্থাটি।

এর মধ্যে গত দেড় বছরে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মানানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়, আর তাতে সফলতাও আসে।

বেশ কয়েক দফায় নেওয়া ২৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বর্তমানে ভাসানচরে বসবাস করছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘উচ্চমানের আশ্রয় কেন্দ্র’ তৈরির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বেচ্ছায় যাবেন, এই রকম বেশ পরিমাণ মানুষ গিয়েছেন সেখানে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে যেটা চেয়েছিলাম, জাতিসংঘ ভাসানচরে তাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করুক।’
২০১৯ সালে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি’র ভাসানচর সফরের পর কিছু ওই দ্বীপের অবকাঠামো নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য গিয়েছিল মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তার সফরের পরে ভিন্ন বার্তা ও বিভ্রান্তিকর কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছিল। আমরা ধৈর্য্য ধরে সম্পৃক্ত থেকেছি।’