সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মতো। এর আকার দ্বিগুণ বাড়িয়ে ট্রিলিয়নে নেওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বুধবার জোহানেসবার্গে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক একটি রোড শো’র অনুষ্ঠানে তার এই স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন বলে বাসস জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটি স্বপ্ন আছে, যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরও স্বপ্ন, আর তা হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং একটি সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত করা।
এই স্বপ্ন পূরণে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামো, বস্ত্র ও পর্যটন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য বিদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী র্যাডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সম্মেলনে ভাষণ দেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। খবর বিডিনিউজ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সহজ করেছে।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রচেষ্টা শুধু আমাদেরই সুবিধাই দেবে না, বরং যারা আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে লাগসই ক্ষেত্রগুলো খুঁজে নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এটাই সময় বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানার। আমাদের সরকার সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, আপনারা আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নিন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন; আমরা একটি টেকসই অংশীদারত্বের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে সহজ নীতি রয়েছে।
আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে, আমরা টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত আছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, এআই ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংযোগ অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ ট্রাডিশনাল কাস্টমার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে বিনিয়োগ ব্যাংকিংকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ‘লুক আফ্রিকা’ নীতি গ্রহণ করেছে জানিয়ে সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আফ্রিকার জনসংখ্যা দেড় বিলিয়ন ছাড়িয়েছে এবং বর্তমানে দ্রুত নগরায়ণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য, বিশেষত বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, ওষুধ ও কৃষি পণ্যের মতো খাতে রপ্তানি সম্প্রসারণের অনুকূল সুযোগ তৈরি করেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ আফ্রিকার নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতা উভয়েই আফ্রিকার অর্থনীতির সম্ভাবনা ও শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের সুবিধার কথা স্বীকার করে। আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী, দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যা ও ভোক্তা চাহিদার কারণে অঞ্চলটি বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির একটি আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সাথে বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামাল সংগ্রহের উপায় খুঁজছে।
গত পাঁচ দশকে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩১৬.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা উভয় দেশের রপ্তানি ও আমদানির পূর্ণ সম্ভাবনার তুলনায় কম। দুই দেশের আমদানি-রপ্তানির আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বাণিজ্য সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতার সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার বাইরে আমরা ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি যৌথ কমিটি’ প্রতিষ্ঠা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তি নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এফবিসিসিআই ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেম্বারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম গঠনের পরিকল্পনায়ও বাংলাদেশের রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে পঞ্চদশ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার জোহানেসবার্গে পৌঁছান শেখ হাসিনা।