সুপ্রভাত ডেস্ক :
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মারা গেছেন ৬৭২ জন।
আজ গতকালের চেয়ে ১৮ জন কম মারা গেছেন। আগের দিন মারা যান রেকর্ড সংখ্যক ৪০ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৩৮১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৫৯৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৮১৬ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ১৬৪ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫৪৫ জন। নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় আজ সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের দিন সুস্থতার হার ছিল ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শনিবার সুস্থতার হার ছিল ২১ দশমিক ০২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১০৪টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১২ হাজার ২২৯টি। গতকালের চেয়ে আজ ৮৭৫টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৪৩৯টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৭৬টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৪৩৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৩৬৯টি।
তিনি জানান, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ২২ জনের মধ্যে পুরুষ ১৯ জন ও নারী ৩ জন। বয়স বিশ্লেষণে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন।
অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জন মারা গেছেন। ২২ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৫ জন, বাড়িতে ৬ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৪৯ জনকে, ছাড়া পেয়েছেন ২২২ জন, বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৬ হাজার ২১ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৮ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৭০০ শয্যা। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি শয্যা। ঢাকা সিটির বাইরে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ রয়েছে ৩৯৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১১২টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ হাজার ৭০৭ জন, ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৫২ জন। এ পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৯ জনকে। এ পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৩ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৯ হাজার ১৩৬ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘণ্টায় সংগৃহিত হয়েছে ১৯ হাজার ১০৭টি। এ পর্যন্ত মোট সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬২টি। গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৯শ’টি। এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২১ লাখ ৪০ হাজার ২৯৩টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৮৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮১টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৪৭ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১০ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৬০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২ হাজার ৯৩ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৭৯ জন। মারা গেছেন গত ২৪ ঘন্টায় ২৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৪৩১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৫১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৬ জন। মারা গেছেন গত ২৪ ঘন্টায় ৪ হাজার ৪৬১ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৬ জন।
‘আপনার সুস্থতা আপনার হাতে’ উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বার বার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।