দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগে দুর্নীতি হচ্ছে : টিআইবি
নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া :
সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলি বিশ্বজিত দাশ ও হিসাব রক্ষক এএইচএম আলমগীরের বিরুদ্ধে নামে বেনামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাকরির পদবি হিসেবে একজন একজন সহকারী প্রকৌশলি ৭ম গ্রেডভুক্ত এবং অন্যজন হিসাব রক্ষক পদবীর ১২তম গ্রেডভুক্ত হলেও তাদের ব্যক্তিগত ও যৌথ নামে ক্ষেত্র বিশেষে বে-নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন। শুধু তাই নয় সাতকানিয়া পৌরসভার বাইরে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে তাদের কোটি কোটি টাকার ৮টি ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যা সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থী। পৌরসভার এ দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের চাঞ্চল্যকর খবরে সচেতনমহল হতবাক ও বিস্মিত। বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছেন পৌর প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারনে এসব দুর্নীতি হয়েছে। জানা যায়, নকশাকারক হিসেবে লামা পৌরসভায় চাকরি জীবন শুরু করেন সাতকানিয়া পৌরসভার বর্তমান সহকারী প্রকৌশলি বিশ্বজিত দাশ। অন্যদিকে সাতকানিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত হিসাব রক্ষক পদে চাকরি করছেন এএইচএম আলমগীর। দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে নিয়োজিত থাকার সুবাদে উভয়েই গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সাতকানিয়া পৌরসভা ভিত্তিক ঠিকাদারী ও যাবতীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শুরু করেছিলেন যৌথ ব্যবসার ধারাপাত। বিশ্বজিত দাশ ও এএইচএম আলমগীরের এনসিসি ব্যাংক কেরানিহাট শাখায় যৌথ একাউন্ট এ (নম্বর-০০৫৮০৩২০০০১২৯০) ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮শ১৭ টাকা। এনসিসি ব্যাংকের একই শাখায় আলমগীরের ব্যক্তিগত একাউন্ট এ (নম্বর-০০৫৮০৩১০০০৯৫২৪) ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা হয় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ৪শ৮৫ টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে উত্তরা ব্যাংক লোহাগাড়ার শাখায় বিশ্বজিত দাশের মা শোভা রানী দাশের নামে ‘শোভা এন্টারপ্রাইজ’ নামের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া কেরানীহাট ও লোহাগাড়ায় তাদের ব্যক্তিগত ও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও রয়েছে একাধিক একাউন্ট। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে উভয়ের ঘনিষ্টজনরা মন্তব্য করেছেন। যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলি বিশ্বজিত দাশ বলেন, আমি, আলমগীর ও বক্কর তিন বন্ধু। আমাদের তিন জনের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। বন্ধু বক্কর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাপ্লাইয়ারের কাজ করেন। প্রায় সময়ই ক্যাম্পে ইট, বালি. রড ও সিমেন্টসহ বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করার জন্য আমাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হলেও প্রকৃতপক্ষে এ টাকার মালিক আমরা নই। হিসাবরক্ষক এএইচএম আলমগীর বললেন, পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা ধার নিয়েছি আবার দিয়েছি যার ফলে ৩ থেকে ৪ বছরের লেনদেনের কারণে হিসাবের অংকটা বড় দেখাচ্ছে। সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, তাদের এসব কর্মকান্ড পৌরসভা দপ্তরের বাইরের বিষয়।
এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু না থাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা না হলে সরকারি কর্মকর্তারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করবে।