জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত
রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
সর্বদক্ষিণের পর্যটন সড়ক খ্যাত কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বাঁকগুলো যেন মরণফাঁদ। এসব বাঁকে বাঁকে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রীরাও শংকিত। লিংকরোড থেকে দীর্ঘ ৭৯ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ৩১ টি বাঁক মৃত্যুফাঁদে পরিণত। এসব বাঁকের কিছু কিছু অংশে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দিক নির্দেশনামূলক ডিজিটাল সাইনবোর্ড স্থাপন করলেও বৃহত্তর অংশে সাংকেতিক চিহ্ন সম্বলিত কোন সাইনবোর্ড নেই। সড়কে ইদানিং যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সময়োপযোগী সড়কের আশাতীত উন্নয়ন ও ডিভাইডার না থাকায় দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বৃহত্তর যাত্রী সাধারণ। উখিয়ার জাদিমোরা বাঁকের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ঠিকাদার শেখ সাহাব উদ্দিন জানান, এ বাঁকটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে সাংকেতিক চিহ্ন সম্বলিত কোন সাইনবোর্ড নেই। বেপরোয়া গতি নিয়ে চলাচলরত অধিকাংশ যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে এ বাঁকে মাইক্রো ও মিনিট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহতসহ ১২ জন যাত্রী আহত হয়েছে। ২০১৮ সালে একই স্থানে ডাম্পারের ধাক্কায় ধুমড়ে মুছড়ে যাওয়া টমটমের যাত্রী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল হক বিএ ও উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল হক ডালিম নিহত হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত ছোটখাট অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। দূরপাল্লার যাত্রীবাহি বাস শ্যামলী সার্ভিসের চালক শামশুদ্দিন জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগ ইতিমধ্যে কিছু কিছু বাঁকে দিক নির্দেশনামূলক ডিজিটাল সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। যা রাতের বেলায় গাড়ির লাইট পড়লে সামনের বাঁকে কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে অধিকাংশ বাঁকে এরকম কোন সাইনবোর্ড নেই। অসাবধানতা বশত এসব বাঁকে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় হতাহত হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারী।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের নিয়মিত যাত্রী টেকনাফ কলেজের প্রভাষক হান্নান জানান, ওয়ান ওয়ে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কটি একেতো সরু উপরন্তু সড়কের বিভিন্ন বাঁকে মাটি কেটে চাষাবাদের জমি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় দুটি যানবাহনকে ক্রসিং করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে।
এনজিও সংস্থা ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ ৭৯ কিলোমিটার সড়কের ৩১টি বাঁকের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দিক নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড নেই। উখিয়ার ট্রাক মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. শাহজাহান জানান, পর্যটন সড়ক হিসাবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ককে যতটুকু উন্নয়ন করা উচিত সড়ক ও জনপদ বিভাগ তা করেনি। উপরন্তু কিছু কিছু স্থানে খানা খন্দকসহ সংকুচিত এ সড়কে পার্শ্বস্থ জায়গাগুলি বেদখল হয়ে যাওয়ার কারণে সবধরনের যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও টেকনাফের উনচিপ্রাং থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত দুটি প্যাকেজে প্রায় সাড়ে ৫শ” কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি অর্থ বছরে বরাদ্ধ এলে এসড়কে ডিভাইডারের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে বাঁকা সড়কগুলো সোজাকরণের ব্যাপারে কোন প্রকল্প নেওয়া না হলেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দিক নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।