নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
হঠাৎ করে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
তারা মনে করছেন দ্রুত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সূত্রটি জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বৃদ্ধসহ তিন জন খুনের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে দুজন জায়গা জমির বিরোধের জের ধরে এবং একজন যৌতুকের জন্য খুন হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ২৫ জুন বেলা আড়াইটার দিকে একদল চিহ্নিত দুর্বৃত্ত ক্ষেমানী বড়ুয়া (৭০) নামে এক বৃদ্ধের গলা, কাঁধ ও হাতসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বৃদ্ধা রামুর পূর্ব রাজারকুল ইউনিয়নের বড়ুয়ার পাড়ার অমিয় বড়ুয়ার স্ত্রী।
এছাড়া কক্সবাজার পৌর শহরে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। প্রতিদিনই সন্ধ্যা, রাত ও ভোররাতে তারা ছিনতাই করছে। শুধু ছিনতাই নয় এসময় তারা ভুক্তভোগিদের ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এদের বেশক’জন ধরা পড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুলে জমির বিরোধের জের ধরে নুরুল হক (৪৫) নামে একজনকে গলায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি।
উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় মর্জিনা আক্তার (২০) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী। তিনি নতুনঘোনা এলাকার দিদারুল ইসলামের স্ত্রী। এঘটনায় নিহত মর্জিনার স্বামী দিদারুলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের নতুনঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- যৌতুকের জন্য এই খুন।
তবে অভিযুক্ত দিদারের মা শাহেনা বেগম জানিয়েছেন, যৌতুকের জন্য কোন সময় নির্যাতন করা হয়নি। আমার বৌ মা অনেক ভাল মেয়ে।
এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে জমি বিরোধের জের ধরে সেকান্দার আলী (৫০) নামে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এঘটনা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে।
এছাড়াও চকরিয়ার বদরখালীতে দুই দ্বাদশী কিশোরীকে অচেতন করে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগ প্রকাশ করে কক্সবাজার সোসাইটিস এর সভাপতি ও সেক্টর কমান্ডার ফোরামস মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, শহরে কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাই বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন অলি গলিতে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় ভোর বেলায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এক স্কুল শিক্ষিকাকে গতিরোধ ও তাকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে রেখে মোবাইল, টাকাসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। দুবৃর্ত্তের দল প্রতিদিনই রাতের আধারে ও ভোর বেলায় তারা সংঘটিত হয়ে ছিনতাই করছে। ধরা পড়ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তারপরও তারা বেপরোয়া। এব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযান পর্যাপ্ত নয়।
কক্সবাজারস্থ দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি এডভোকেট মো. আবদুর রহিম জানালেন, কক্সবাজারে সম্প্রতি অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। অপরাধীরা ধরা পড়লেও অনেকেই আইনের ফাঁক দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। যার কারণে তারা আবারও সংঘটিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আইনের ফাঁক দিয়ে যেন কোন অপরাধী জেল থেকে ছাড়া না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই অপরাধ প্রবণতা কিছুটা রোধ হবে।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন- এটাকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে বলা ঠিক হবে না। ঘটনাগুলো আকস্মিক ভাবে ঘটে যায়। আসলে মানুষের সহনশীলতা কমে গেছে। পারস্পরিক বিশ্বাস শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ায় কথায়-কথায় পরস্পর খুনে জড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন- খুনের ধরণ গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখবেন এখানে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নেই। অথবা এগুলো কোনো অজ্ঞাত খুনও নয়। নিজেদের মধ্যে অসহনশীল মনোভাব থেকে বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে।