স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত

সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া »
সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় স্কুলছাত্রসহ দু’জন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় নলুয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড অফিস ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও বাজালিয়ার বোর্ড অফিস কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন আব্দুস শুক্কুর (৪৫) ও তাসিব (১৩)।
তাসিব নলুয়ার মরফলা বোর্ড অফিস এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে ও মেম্বার প্রার্থী মিজানুর রহমানের ভাতিজা এবং শুক্কুর বাজালিয়ার নৌকা প্রার্থীর সমর্থক বলে জানা যায়। আহতরা হলেন সোনাকানিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম চৌধুরী (৪৫) মিনহাজ (৩০), সেলিম উদ্দিন (৩৩), সারফিন (১৮), এহছান (২৪), আহমদ হক (৩২), রাকিব (২২), হাসান, পারভেজ ও আলাউদ্দিন।
নিহত তাসিবের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট চলছিল। হঠাৎ দুপুরে নৌকা প্রার্থীর বহিরাগত লোকজন এসে পাশের দোকানে হামলা করে। এসময় তাদের দায়ের কোপে আমার ভাতিজা মারা যায়। সে আরএমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নলুয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্র ইনচার্জ এএসআই মো. আবদুল মতিন জানান, কেন্দ্রের বাইরে এক ছেলেকে কুপিয়েছে বলে শুনেছি। পরে ছেলেটি মারা গেছে বলে জানতে পারি। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
সকাল সাড়ে ৯টায় বাজালিয়া বড়দুয়ারা ভোটকেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, বেশকিছু ব্যালটে নৌকার সিল মারা রয়েছে। কেন্দ্রে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় সাময়িক ভোট স্থগিত রাখা হয়।
বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ কেন্দ্রে নৌকার লোকজন আমার এজেন্টকে মারধর বের করে দেন।
সাতকানিয়া থানার এসআই মাহবুবুল আলম বলেন, বাজালিয়ায় ভোটকেন্দ্রে ঘটনার খবর পেয়ে গিয়েছি। পরে আহত একজনকে কেরানীহাটের মা শিশু জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টুটুল বলেন, শুক্কুর আলীর কুচকিতে গুলি লেগেছিল। উদ্ধার করে হাসপাতাল পাঠালেও বাঁচানো যায়নি।
সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ভোট হচ্ছে ১৬টি ইউনিয়নে। এর মধ্যে আরও কয়েকটি ইউনিয়নে সকাল থেকে গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে।
সকালে খাগড়িয়া ইউনিয়নের গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ইউনিয়নের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকতার হোসেন এবং মোটর সাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম উদ্দিনের সমর্থকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে দুই কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়। ওই দুই কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব কয়েকশ গজ।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভোটাররা কেন্দ্র ছেড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মারামারির মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় বলে স্থানীয়রা জানান। বেলা সাড়ে ১০টার পর গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার রশিদুল হক। এরপর সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর আবারও গোলাগুলি শুরু হয়। এদিকে ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলার অভিযোগও পাওয়া গেছে।