সিট খালি নেই হাসপাতালে

বৃহস্পতিবারের মধ্যে চালু হতে পারে চমেক হাসপাতাল করোনা ইউনিট : হাসপাতালের পরিচালক

ভূঁইয়া নজরুল :
‘সুস্থ রোগী ছাড়পত্র পেলেই করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হবে’ এই সূত্রে চলছে নগরীতে করোনা চিকিৎসা। করোনা চিকিৎসায় নগরীর তিন (আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ও ফিল্ড হাসপাতাল) বিশেষায়িত হাসপাতালের কোনোটিতে সিট খালি না থাকায় অন্য কোনো উপায়ও দেখছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে করোনা চিকিৎসায় নতুনভাবে অনুমোদন পাওয়া চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হতে সময় লাগবে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত। সেই হিসেবে চলতি সপ্তাহ রেশনিং করেই রোগী ভর্তির দিকে এগুচ্ছে হাসপাতালগুলো।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র সার্জন ডা. আবদুর রব বলেন, ‘গতকাল রোববার থেকে জেনারেল হাসপাতালের ১১০টি বেডের সবগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। তাই নতুন কোনো রোগী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। তবে সোমবার সাতজন রোগী রিলিজ দিয়েছি এবং আমরা সাতজন রোগী ভর্তি করিয়েছি।’
একই মন্তব্য করেন করোনা চিকিৎসায় নগরীর অপর হাসপাতাল ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি। এই হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ হাসান বলেন, আমাদের এখানে ৩০টি বেডের সবগুলোতে রোগী রয়েছে। এসব রোগীর মধ্যে চারজন সোমবার রিলিজ হয়েছে। তাহলে আমরা নতুন করে আরো চারজন রোগী ভর্তি করাচ্ছি। এর বেশি সম্ভব নয়।
এদিকে অপর এক সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালগুলোতে রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ না হলেও রোগীদের বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। আর সেই জায়গায় নতুন রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। তবে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্রের বিষয়টি কেউ স্বীকার করেনি। এবিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘আমাদের এখানে সিট নেই সত্যি। তবে খুবই মুমুর্ষ রোগীদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে। করোনা পজিটিভ হয়েছেন কিন্তু সুস্থ আছেন এমন রোগীদের আমরা ভর্তি করাচ্ছি না। তাদেরকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে সুপারিশ করা হচ্ছে।’
হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হবে কবে?
বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের সহযোগীতায় দীর্ঘদিনর পরিত্যক্ত থাকা হলিক্রিসেন্ট হাসাতালকে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোববার এবিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে একটি নির্দেশনাও এসেছে। আর সেই নির্দেশনায় জেনারেল হাসপাতালের অধীনে হাসপাতালটি পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। এবিষয়ে কথা হয় জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথের সাথে। তিনি বলেন, ‘এরকম একটি চিঠি গতকাল আমরা পেয়েছি। তবে নতুন ডাক্তার যেগুলো পেয়েছি সেগুলোর সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি করে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু করতে হবে। কিন্তু তা কবে চালু করা হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু হাসপাতালটি রেডি রয়েছে তাই হয়তো চিকিৎসকদের টিম তৈরি করা গেলে চালু করা যাবে।‘
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় চট্টগ্রামের জন্য সম্পূর্ণ আইসোলেটেড হাসপাতাল হলো হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। এবিষয়ে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা প্রতিরোগ কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১১টি আইসিইউ ও ৯টি এইচডিও সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ৮০টি সাধারণ বেড রয়েছে। শুধু জনবল সুবিধা দিয়ে এটি চালু করা যাবে। এটি চালু হলে রোগীরা ভাল সেবা পাবে। এছাড়া সাধারণ রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয় থাকে না।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রায় প্রস্তুত রয়েছে। নতুন কিছু ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয় নিয়োগ দিয়ে টিম তৈরি করতে হবে। মঙ্গলবার হাসপাতালটি দেখতে গিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। সেই হিসেবে হয়তো এসপ্তাহের শেষে চালু করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট কবে চালু হবে?
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোডিভ-১৯ চিকিৎসায় অনুমোদন দেয়া হাসপাতালটি কবে নাগাদ চালু হবে সেবিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. হুমায়ুন কবিরের কাছে। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে পৃথক ইউনিট তৈরি করেছি। এছাড়া কোভিড-১৯ রোগীদের আসা যাওয়ার জন্য পৃথক প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ তৈরি করেছি। এতে সাধারণ রোগীদের সাথে সংস্পর্শের কোনো সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ আইসোলেটেড থাকবে।
কবে নাগাদ তা চালু করা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কিছু চিকিৎসক যোগদানের কথা রয়েছে। মঙ্গলবার বা বুধবারের মধ্যে এসব চিকিৎসক পেয়ে গেলে আমরা হয়তো বৃহস্পতিবার থেকে করোনা রোগী ভর্তি শুরু করতে পারবো আশা করছি।
তবে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, বৃহস্পতিবারের আগেই হয়তো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালু করা যেতে পারে। এখানে ১০০ বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই করোনা চিকিৎসায় আপাতত সমস্যা হবে না বলে মনে করছি।
উল্লেখ্য, করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামের আরেকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হলো ফিল্ড হাসপাতাল। ৫০টি বেড রয়েছে হাসপাতালটি। ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়ার তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া সেই হাসপাতালটি রোগী পূর্ন রয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন করে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৯১ জন। এদের মধ্যে মারা গিয়েছে ৩২ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে ১১৩ জন।