সংশোধন হচ্ছে জাতীয় সংস্কৃতি নীতি

সুপ্রভাত ডেস্ক :
বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশ ও সুষ্ঠুভাবে অব্যাহত রাখতে ২০০৬ সালের জাতীয় সংস্কৃতি নীতি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশোধিত খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছে। জানতে চাইলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, ‘সংস্কৃতিমনা মানুষ গড়তে জাতীয় সংস্কৃতি নীতি আরও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের জনগণের নিজস্ব সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা ও ধর্ম বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখতে এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
খসড়া নীতির ভূমিকায় বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যথাযথ লালন এবং প্রচার, প্রসার ও অধিকতর উন্নয়নের জন্য জাতীয় সংস্কৃতি নীতি হালনাগাদ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
সংশোধিত নীতিমালা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হবে। জাতীয় সংস্কৃতির উদ্দেশের একাংশে বলা হয়, জাতীয় সংস্কৃতির উদ্দেশ্য হচ্ছে আবহমান ঐতিহ্যের অনুসরণ করে বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের জনগণের নিজস্ব সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা ও ধর্ম বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখা।
বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য সংস্কৃতির ইতিবাচক প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং সকল অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। জাতীয় সংস্কৃতির মূল নীতিতে বলা হয়েছে, এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগণের হাজার বছরের সংগ্রামী ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং দেশে বসবাসকারী সকল জনগণের ধর্মবিশ্বাস সমুন্নত রাখার সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ। জাতীয় সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নয়ন এর অবক্ষয় রোধ এবং জাতীয় উন্নয়নে সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
খসড়া নীতে সংস্কৃতির নীতি বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে নীতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মণালয়, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংস্কৃতি নীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
খসড়া নীতিমালায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নতুন করে আনা হয়েছে। সুষ্ঠু নাট্যচর্চা, যাত্রা শিল্পের উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নাট্যকলা বিভাগ খোলা এবং ঢাকায় নাট্য একাডেমি খোলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
সুষ্ঠু নাট্যচর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নাটক মঞ্চায়নের সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়। এছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রথমে বিভাগীয় শহরে এবং পরে জেলা শহরে স্থায়ী নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়। একইসঙ্গে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় পেশাদার নাট্যদল পরিচালনা করা প্রয়োজন।
যাত্রা শিল্পের সার্বিক কল্যাণ, প্রচার ও প্রসারে যাত্রা ও পুতুলনাট্যকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রণীত বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ ট্রাস্ট গঠন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা বলা হয়।
প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থানরত নাটক ও যাত্রাশিল্পীদের ভাতা ও প্রয়োজনে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব, যাত্রা উৎসব আয়োজন করতে হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উন্নয়নের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে খসড়া নীতিতে। খবর বাংলাট্রিবিউন।
খসড়া নীতির ভূমিকায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে ‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিতোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন।’ আর সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন তা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহ বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ’ সংবিধানের এ দুটি অনুচ্ছেদের আলোকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রশাসন ব্যবস্থার অঙ্গীভূত করে। বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয় মন্ত্রণালয় স্বতন্ত্র একটি মন্ত্রণালয়।