শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা থাকবে অ্যাসাইনমেন্ট

পরীক্ষা নেয়া না গেলে অ্যাসাইনমেন্ট থেকে প্রাপ্ত নম্বরের আলোকে ফলাফল তৈরি হবে, অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষা প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে : শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা

ভূঁইয়া নজরুল »
চলছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম। কিন্তু এই অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ, মূল্যায়ন এবং চূড়ান্তকরণে শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের কি কাজ কিংবা শিক্ষাবোর্ডগুলো এসব অ্যাসাইনমেন্ট কখন সংগ্রহ করবেন সেটা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন। অনেকে শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে নানা প্রশ্নও করছেন।
অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকা সত্বেও বিভিন্ন মুখী প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন কিভাবে করবে সেজন্য একটি রুব্রিক্স (নম্বর প্রদান নীতিমালা) দেয়া হয়েছে। সেই রুব্রিক্স অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্টটি মূল্যায়ন করবেন। তবে মূল্যায়নের সময় কোনোভাবেই খাতার ভেতরে নম্বর লেখা যাবে না। অ্যাসাইনমেন্টের কভার পেইজ ইংরেজিতে নির্ধারিত স্থানে প্রাপ্ত নম্বর বসাতে হবে।’
কিন্তু লাল কালি ও কালো কালির ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, সঠিক উত্তরের নিচে কালো কালি দিয়ে দাগ দিতে হবে এবং ভুল অংশের নিচে লাল কালির কলম দিয়ে মার্ক করতে হবে।
এদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৫ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। এসব অ্যাসাইনমেন্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সংগ্রহ করে আওতাধীন শিক্ষার্থীদের কাছে বিতরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। এসএসসিতে আবশ্যিক বিষয়গুলো ছাড়া তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রতিটিতে ৮টি অ্যাসাইনমেন্ট ১২ সপ্তাহে জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে পঞ্চম সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যাসাইনমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে। অপরদিকে এইচএসসি পর্যায়ে আবশ্যিক বিষয় ছাড়া তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রতিটিতে ১০টি অ্যাসাইনমেন্ট ১৫ সপ্তাহে জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যাসাইনমেন্ট বিতরণ করা হয়েছে।
তবে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ, মূল্যায়নসহ মাঠ পর্যায়ে নানাবিধ প্রশ্নের উদ্রেক হওয়ায় মাউশি থেকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম মনিটরিং কমিটি’ গঠন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট মাউশির পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং) প্রফেসর আমির হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষগণ তাদের নেতৃত্বে সমন্বয়ে এই মনিটরিং কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি সকল শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে কিনা, অ্যাসাইনমেন্ট লেখায় শিক্ষার্থীরা নকলের আশ্রয় নিচ্ছে কিনা কিংবা নিজে লিখছে কিনা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলছে কিনা তা যাচাই করবে।
অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ সমীর কান্তি দাস বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে সঠিক নির্দেশনা থাকার পরও অনেকের প্রশ্ন আছে। মাউশির নির্দেশনার আলোকে সমাধানের চেষ্টা করছি। নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে তাদের মূল্যায়িত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে। প্রতিষ্ঠান এসব সংরক্ষণের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে এসব অ্যাসাইনমেন্ট কবে নেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’ এদিকে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকদের একইসাথে শিক্ষকরা যাতে সঠিকভাবে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে পারে সেজন্য সংসদ টিভিতে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ এর আওতায় প্রতিদিন বিকাল ৫টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করছে। গত ১৯ আগস্ট মাউশির উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত আদেশে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
আগামী নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষার নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আবশ্যিক বিষয় ছাড়া নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। তারপরও যদি কোভিড পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে এসব অ্যাসাইনমেন্ট থেকে প্রাপ্ত নম্বরের আলোকে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এবিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এখনই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করছি না। এমনকি নম্বরপত্রও সংগ্রহ করা হচ্ছে না। আপাতত অ্যাসাইনমেন্টগুলো প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। মাউশির নির্দেশনা দিলে সংগ্রহ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আশাবাদী। আর পরীক্ষা যেসব অধ্যায় থেকে নেয়া হবে সেসব অধ্যায় থেকেই অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। এতে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যাবে এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারবে।
উল্লেখ্য, কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। অটোপাশ দেয়া হয়েছে ফরম পূরণ করা সকল পরীক্ষার্থীদের। তবে এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিল। এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও যথাসময়ে নেয়া যায়নি। তবে এবার আর অটোপাশ দেয়ার কথা ভাবছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্যই অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছে। আর এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শেষ হয়েছে এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ গত ১২ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে।