শারুন চৌধুরীসহ সব দোষীর শাস্তি দাবি ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রীর

সুপ্রভাত ডেস্ক <<
চট্টগ্রামের ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীকে হুমকি ও মানসিক চাপ প্রয়োগে আত্মহত্যায় বাধ্য করায় শারুন চৌধুরীসহ সব অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ও স্বজনরা। খবর বাংলানিউজের।
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ছাড়াও মোর্শেদ চৌধুরীর মা নুর নাহার এবং কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুম উপস্থিত ছিলেন।
মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, আমার স্বামীর আত্মহত্যার প্রায় আড়াই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অপরাধী ও অভিযুক্তরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এর পাশাপাশি তারা বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে চাপের মুখে রেখেছে।
যেকোনো মুহূর্তে শারুন চৌধুরী গংয়ের দ্বারা জীবন ও সম্পদহানির আশঙ্কার কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন ইশরাত জাহান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ৮ এপ্রিল তিনি চার জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন-চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিব ও যুবলীগ নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল। শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু গংদের নেতৃত্বে ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। তখন এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পুলিশের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু তাতে সুফল আসেনি।
ইশরাত চৌধুরী বলেন, প্রভাবশালী শারুন চৌধুরী আমার স্বামী মোরশেদ চৌধুরীকে একদিন ফোন করে চট্টগ্রাম র‌্যাডিসন হোটেলে দেখা করতে বলেন। আমার স্বামী তাতে আপত্তি করে বলেছিলেন, অ্যাপনার সঙ্গে তো আমার সরাসরি কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন নেই, তাহলে কেন দেখা করতে বলছেন? তখন শারুন চৌধুরী অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে আমার স্বামীকে হুমকি দিয়ে বলেন, লেনদেন নেই, এখন হবে।
ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, মোর্শেদ চৌধুরীর সঙ্গে শারুন চৌধুরীর সরাসরি কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন না থাকলেও পারভেজ ইকবাল ও জাবেদ ইকবালের মাধ্যমে শারুন চৌধুরী আমার স্বামীর সঙ্গে ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করেন বলে তিনি শুনেছিলেন। শারুন চৌধুরী তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমার স্বামীকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলেন।
‘র‌্যাডিসনে যাওয়ার হুমকির রাতে ২৯ মে, ২০১৯ ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ উভয় ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। ওই রাতে ব্যবসায়ী আজম খানের বাসায় মোর্শেদকে ডেকে নেওয়া হয়, সেখানে শারুনও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ইশরাত।
তিনি বলেন, শারুনের সহযোগী ছিল শহীদুল হক চৌধুরি, রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল ও তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাঈম উদ্দিন সাকিব। আত্মীয় হিসেবে এমপি দিদারুল আলম মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন। শারুন ও পারভেজ না আসায় তা সম্ভব হয়নি। শারুন চৌধুরী ও তার বন্ধুরা মোর্শেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ আত্মহত্যা প্ররোচনার মধ্যে পড়ে।
ইশরাত জাহান চৌধুরী আরও বলেন, অভিযুক্তরা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় আমার পরিবার কোনো সহযোগিতা পাননি। শারুনের ব্যবসায়িক পার্টনার পারভেজ সাকিব গং ব্যবসায়িক কারণে কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেন মোর্শেদকে। এই ঋণের বিপরীতে মোর্শেদ লাভসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। তারপরও চক্রটি এক পর্যায়ে জোরপূর্বক অলিখিত চেক ও স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেয়। আর এগুলোর ভয় দেখিয়ে তারা আরও টাকা দিতে চাপ ও নানাভাবে হুমকি দেন এবং ফ্ল্যাটে হামলা চালান। অব্যাহত চাপে অতিষ্ঠ হয়ে মোর্শেদ আমাদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে চাইলে তারা জানতে পেরে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। ফলে একটু স্বস্তির সঙ্গে বাঁচার সব অবলম্বন হারিয়ে আমার স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইশরাত চৌধুরী বলেন, আমার স্বামী মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার নেপথ্যে থাকা শারুন চৌধুরীকে বাঁচাতেই কি আসামিদের ধরা হচ্ছে না? আমি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মোর্শেদ চৌধুরীর মা নুর নাহার বলেন, আমি আমার চার সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করেছি। আমার দুই ছেলের সুখি ও সাজানো পরিবার ছিলো। মোর্শেদ মারা যাওয়ায় তার পরিবারের পাশাপাশি আরেক ছেলেও মানসিক কষ্টে রয়েছে। মোর্শেদের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের কারণে তাকেও পালিয়ে থাকতে হয়েছিলো।
মোরশেদ চৌধুরীরে মেয়ে মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুম বলে, আমার পাপা ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার পাপাকে ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিলো। যার কারণে আমার পাপা আত্মহত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই। এ বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
বাবার সঙ্গে শেষ আলাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নানুবাড়িতে ছিলাম। পাপা ভিডিও কলে শেষবার আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন তিনি আমাকে টেনশন করতে মানা করেছিলেন।
শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চু গংয়ের অব্যাহত চাপ, হুমকি ও হামলার কারণে নিরুপায় হয়ে ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরী গত ৭ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন।