রোগী ফেরত দেয়া মানবতা বিরোধী, চিকিৎসা সেবাদানকারীদের অভিনন্দন :তথ্যমন্ত্রী

ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা ইউনিট উদ্বোধনকালে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

‘করোনার এসময়ে সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত দেয়া মানবতাবিরোধী আচরণ’ উল্লেখ করে একইসাথে এসময়ে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা ইউনিট উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসকল কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম ১৩ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম ৯ আসনের এমপি ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ।
ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ৫০ বেডের কোভিড ইউনিট স্থাপনের জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আজ মা ও শিশু হাসপাতাল যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। কারণ আজকের পত্রিকায়ও আমরা দেখছি, হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে স্ত্রীর সামনে অসহায়ভাবে স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত।’
‘কোনো হাসপাতাল থেকে রোগীকে এভাবে ফেরত দেয়া মানবতাবিরোধী কাজ এবং যে সমস্ত হাসপাতাল এটি করছে, তারা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কাছ থেকে শিক্ষা নেবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী। সেইসাথে তিনি জানান, সরকার এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে করোনার সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে তাদের এসময় কাজে আসতে না চাওয়াটা কোনোভাবে সমীচীন নয় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মানুষকে চিকিৎসা ও সেবাদানের জন্যই লেখাপড়া করেছেন, তাদের হাত গুটিয়ে নেয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে সৈন্য পলায়নের মতো।’ এসময় পুলিশবাহিনীর উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবার যেখানে এগিয়ে আসেনি, পুলিশ ও প্রশাসন সেখানে সৎকারের ব্যবস্থা করেছে।
তথ্যমন্ত্রী এ মহামারি পরিস্থিতিতে গুজব ও আতংক ছড়ানো প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের অব্যাহত ভূমিকার প্রশংসা করেন ও সবাইকে অহেতুক সমালোচনা পরিহার করে মানুষের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান। চট্টগ্রামে অন্যান্য হাসপাতালগুলোও মা ও শিশু হাসপাতালের মতো দ্রুত এগিয়ে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা বেশ সহযোগিতা পেয়ে আসছি। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল আমাদের জন্য অহংকার, তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছে। অনেকটা প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের মতো।
চট্টগ্রামে আরো যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল আছে তাদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, মানুষকে যতটুকু সম্ভব হেল্প করেন, মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে হবে, নাহলে সমস্যা বাড়বে। আতংকিত নাহয়ে সচেতন হতে হবে, প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন চট্টগ্রামে আপ চলছে, এরপর ডাউন হয়ে যাবে এবং আমরা ওভারকাম করবো ইনশাল্লাহ।
মন্ত্রী আরো বলেন, কোভিট পজিটিভ হলেই যে হাসপাতালে যেতে হবে তা কিন্তু নয়। বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেয়া যায়। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্থানীয় মিডিয়ায় ‘অক্সিজেনে শ্বাস নিতে চায় চট্টগ্রাম’ এ ধরনের শিরোনামে সংবাদ আসায় আরো বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বাসায় প্রায় ১০ জন করোনা পেশেন্ট ছিল, কিন্তু চিকিৎসকরা আমাদেরকে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে এরকম কিছু বলেননি। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় সাথে সাথেই যে অক্সিজেন লাগবে বিষয়টা সেরকম নয়। কিন্তু এ সংবাদের ফলে ভীতি থেকে অনেকের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার বা নেয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। জনগণের মধ্যে একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, নন-কোভিট পেশেন্টরা এ মুহুর্তে চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, মা ও শিশু হাসপাতাল ১০ টি আইসিইউ বেডের সুবিধাসহ ৬০ শয্যার করোনা চিকিৎসা ইউনিট চালু করে নজির স্থাপন করেছে। আশাকরি, তাদের দেখে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালও উদ্যোগ নেবে। অনেকগুলো হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চালু হলে বৈশ্বিক এই মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে যাবে।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ ভিডিও-কনফারেন্সে যোগ দেন। বিজ্ঞপ্তি