যেভাবে ধরা পড়লো ইকবাল

অপরাধের দায় স্বীকার

সুপ্রভাত ডেস্ক »
কুমিল্লার নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ে দর্পন সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার কথা স্বীকার করেছেন ইকবাল হোসেন। তবে কার নির্দেশে তিনি এ কাজটি করেছেন, তা এখনো জানাননি।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইকবাল এ ঘটনা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
‘কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনায় আলোচিত যুবক ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করার পর কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, কক্সবাজারে গ্রেফতার ওই যুবকই কুমিল্লার ইকবাল, যাকে সিসি ক্যামেরায় ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়েছিল।
গ্রেফতার ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সুজানগর এলাকার মাছ বিক্রেতা নূর আলমের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তাকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ‘ঘোরাঘুরির সময়’ গ্রেফতার করা হয় বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাডমিন) জানিয়েছিলেন। খবর বিডি, বাংলানিউজ ও বাংলাট্রিবিউন।
সেই খবর পাওয়ার পর কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকারের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কক্সবাজারে যান। ইকবালকে নিয়ে সকালে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়ে বেলা ১২টার পর তারা কুমিল্লায় পৌঁছান।
পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের টিম নিশ্চিত হয়েছে। আটক ব্যক্তিই কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখেছেন। তাকেই সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে।’
যেভাবে ধরা পড়লো ইকবাল
কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া কয়েক তরুণের সঙ্গে গানে গলা মিলিয়ে ধরা পড়েছেন কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত ইকবাল। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার পুলিশ ইকবালকে গ্রেফতার করে।
ছাত্রলীগ কর্মী ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের মাস্টার্সের ছাত্র অনিক রহমান দাবি করেন, আমি, বন্ধু মেহেদী হাসান মিশু ও সাইফুল ইসলাম সাইফ মিলে ইকবালকে ধরিয়ে দিয়েছি।
ওই তিন জনকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা ও কক্সবাজার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইকবালকে ধরা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর (বেগমগঞ্জ সার্কেল) এএসপি শাহ ইমরান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ কর্মী অনিক ও মিশু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইকবালের তথ্য দেন। তারা ইকবালকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা চান। পরে আমি কুমিল্লা ও কক্সবাজারের পুলিশের সঙ্গে ইকবালকে গ্রেফতারের জন্য যোগাযোগ করি।
ইকবালকে গ্রেফতারের ঘটনা বলতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী অনিক বলেন, ১৯ অক্টোবর সোমবার রাতে বন্ধু মেহেদি হাসান মিশু ও ঢাকার তিন ব্যবসায়ী বন্ধু রায়হান, মামুন ও হৃদয়সহ পাঁচ জন কক্সবাজারে বেড়াতে যাই। ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে থাকা আরেক বন্ধু সাইফুল ইসলাম সাইফ আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর বিকাল ৪টায় দরিয়ানগরে ঘুরতে বের হই। সেখানে ছয় বন্ধু মিলে সময় কাটাতে গান গাওয়ার সময় ইকবালও পাশে এসে গানে সুর মেলায়। এরপর ওই রাতে টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে ছবি দেখে ইকবালের বিষয়ে নিশ্চিত হই।
এস এ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মিশু বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তারা সুগন্ধা পয়েন্টে গেলে ইকবালের সঙ্গে তাদের আবার দেখা হয়। তখন আমরা তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলি। একপর্যায়ে সে পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে নাশতা ও সিগারেট খাইয়ে কৌশলে আটকে রাখি। এ সময় তার নাম জানতে চাইলে সে ইকবাল বলে জানায়। তখন আমরা কৌশলে তার ছবি তুলে নোয়াখালীর এএসপির সঙ্গে যোগাযোগ করি ও ছবি পাঠাই। তিনি আমাদের কুমিল্লার পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর দেন। এরপর কুমিল্লার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবি পাঠাই। তিনি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ এসে ইকবালকে আটক করে নিয়ে যায়।
এর আগে, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে আসে। সেখানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মসজিদ থেকে কীভাবে কোরআন নিয়ে বের হয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা হাতে নিয়ে ফেরেন।
দুর্গাপূজার মধ্যে ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পন সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাংচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে। এর পরের কয়েকদিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলার আশা করলেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত তা নিয়ে সংশয়ী।