মৃত আয়নীর খোঁজ মিলেছে!

ধর্ষণের পর হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

মা ফাতেমা আটদিন ধরে থানার দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও অপহৃত দশ বছরের শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী’র সন্ধান বের করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে আদালত মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর নোটিশ থানায় পৌঁছার আগেই আয়নীর মরদেহের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর পাহাড়তলীর ওয়ার্লেসের আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগিফার্ম এলাকা থেকে আবিদার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানায় পিবিআই।

গতকাল বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে আবিদা অপহরণ মামলার আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো টিম শিশু আবিদা নিখোঁজের রহস্য উন্মোচন করেছে।

জানা যায়, আবিদা নিখোঁজের পর তার মা বিবি ফাতেমা তার সন্তানকে উদ্ধারে একাধিকবার পাহাড়তলী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। প্রধান আসামি মো. রুবেল (৩৫) তার সন্তানকে নিয়ে গেছেন বলে পুলিশকে বার বার জানিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের এমন অভিযোগ কানে না নিয়ে মামলা নেয়নি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। নিরুপায় শিশুর মা আদালতে মামলা করেন। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ থানায় এসে পৌঁছেনি। এরমধ্যে পিবিআই শিশু আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা পুলিশের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে নিখোঁজ শিশুর মা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শোনার পর মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনোভাবে মুখ খুলছিলেন না রুবেল। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোর রাতে শিশু আয়নীকে তিনিই হত্যা করেছেন বলে জানায়। এরপর বস্তায় ভরে তার মরদেহ ফেলে দেয় পার্শ্ববর্তী ডোবায়। তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করেন।

ভুক্তভোগীর মা মামলার বাদি বিবি ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, ‘তার শিশু কন্যা আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী কাজীর দীঘি (সাগরিকা রোড) এলাকার একটি মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। ২১ মার্চ আমার মেয়ে স্কুল থেকে বাসায় আর ফিরে আসেনি। বাসায় না ফিরলে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পাহাড়তলী থানায় গিয়েছি। এরপর আমরা থানায় মো. রুবেলকে অভিযুক্ত করলেও পুলিশ তাকে ধরে সাধারণ কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দেন। তার পরদিন আমরা আবার থানায় গেলে ওসি আমাদের বলে আমার শিশুকন্যা কারও সঙ্গে প্রেম করে চলে গেছে। নয় বছরের শিশু কি কারও সঙ্গে প্রেম করতে পারে? আমার মেয়ের খুনের সাথে জড়িতদের ফাঁসি চাই। যারা তদন্তে অবহেলা করে অপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছে তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

বাদির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আদালতের মামলার নিদের্শনা আজ (বুধবার) থানায় এসে পৌঁছেছে। এরপর আমরা মামলা গ্রহণ করি। এর আগে অপহৃত আয়নীর পরিবার থানায় অভিযোগ করলে আমরা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে মো. রুবেলসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে আমাদের মনে হয়েছিল তারা অপরাধের সাথে যুক্ত না। তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাদের আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিলাম।’

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দায় স্বীকার আসামির
শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীকে ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার মো. রুবেল।বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে রুবেল এ স্বীকারোক্তি দেন।

গ্রেফতার মো. রুবেল, নগরের পাহাড়তলী থানার কাজিরদিঘী ডা. নজির বাড়ির মৃত আব্দুল নূরের ছেলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার রুবেল ধর্ষণের পরে শিশু আয়নীকে গলাটিপে হত্যার পর মরদেহ ডোবাতে ফেলে দেন বলে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।