ময়লা-পুরানো তেল নিলামে তুলছে কাস্টমস

অবিক্রিত রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার ৫৬০ লিটার সয়াবিন তেল

Pouring food oil in hot pan for deep frying.

নিজস্ব প্রতিবেদক »

২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আনা সয়াবিন তেলসহ ডিজেল ও লুব্রিক্যান্ট এনে খালাস না করায় তা জমা পড়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এ তেলগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকায় জারগুলো ভেঙে গেছে। এছাড়াও তেলে জমেছে ময়লা। ফলে এ তেল কেনায় ক্রেতাদের কোনো আগ্রহ নেই। এরপরও তৃতীয়বারের নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। কাস্টমসের দাবি, তেলগুলো ময়লাযুক্ত, তবে তা ব্যবহার উপযোগী এবং খালাসযোগ্য।

জানা যায়, প্রায় ১৩ বছরের পুরানো তেলগুলো বিক্রির জন্য দুই দফায় নিলামে তোলা হয়েছে। ১২ হাজার ২৬০ লিটার তেলের মধ্যে দুই দফায় বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ লিটার। অবিক্রিত পড়ে থাকা ৮ হাজার ৫৬০ লিটার সয়াবিন তেল পুনরায় নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিলামে তোলার আগে রাষ্ট্রায়ত্ব তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তেলগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তেলগুলো ব্যবহারযোগ্য থাকায় আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একটা নিলামের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম শাখা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম শাখা) সৌমেন চাকমা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমদানি করা তেলগুলো প্রায় ১৩ বছর ধরে খালাস না হওয়ায় বন্দরে পড়ে আছে। এতে বন্দরের জায়গা ব্লক হয়ে আছে। তাই আমরা তেলগুলো নিলামে তুলছি। এতে জায়গাও খালি হবে, রাজস্বও আসবে। এবারের নিলামে অল্প পরিমাণে ডিজেল ও লুব্রিকেন্ট থাকবে, আর সাড়ে আট হাজারের বেশি লিটার সয়াবিন তেল রয়েছে। ’

তেলগুলোতে ময়লা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো ব্যবহারযোগ্য বলেই নিলামে তোলা হচ্ছে। না হলে এগুলো নিলামে না তুলে নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিতো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ’

কথা হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) অনুপম চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তেলগুলো অনেক আগে আনা হয়েছে। যে জারগুলোতে তেল সংরক্ষিত আছে তার অধিকাংশই জরাজীর্ণ, ভাঙা আর ময়লাযুক্ত। এজন্য আমরা সয়াবিন তেলগুলো ইস্টার্ন রিফাইনারির ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছি। তেলগুলো ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় নিলামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি আমরা ভালো সাড়া পাবো।

পুরানো তেল নিলামে তোলা বিষয়ে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এগুলো আসলে ল্যাব পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব না। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারি ল্যাবের পরীক্ষায় তেলগুলো ব্যবহার উপযোগী বললে সন্দেহ থেকে যায়। কেননা সাধারণত ভোজ্যতেলের মেয়াদকাল দুই বছরের বেশি হয় না। এরপরও ধরেন আরও দুই বছর বাড়িয়ে হিসেব করলেও এ তেল স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার কথা না।’

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ল্যাব পরীক্ষা ছাড়া আসলে মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে প্রায় ১৩ বছর পড়ে থাকা তেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। এরপরও ল্যাব পরীক্ষায় ব্যবহার উপযোগী বলে থাকলেও এ তেল নেওয়ার পর বিক্রির আগে পরিশোধন প্রক্রিয়া ঠিকভাবে না করলে ঝুঁকি থেকে যাবে।’

পুরানো তেল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে খাদ্য বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. রায়হান ফারুকী বলেন, ‘এতোদিনের পুরানো তেল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি অবশ্যই থাকবে। এ তেল ব্যবহারের কারণে বিশেষ করে হার্টের রোগীদের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া হজমে সমস্যা হবে। এগুলো নিঃসন্দেহে ব্যবহার অনুপোযোগী।’