ব্যবসায়ীকে অপহরণ দায়ে সাত ডিবি পুলিশের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক ৭ সদস্যকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। একইসাথে দ-িত আসামিদের প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকা করে অর্থদ- দেওয়া হয়েছে। অর্থদ- অনাদায়ে আরো ২ বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় দ-িত ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

দ-িত আসামিরা হলো কক্সবাজার জেলা পুলিশের ডিবি’র সাবেক সদস্য এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো. মনিরুজ্জামান, এএসআই মো. গোলাম মোস্তফা, এএসআই মো. ফিরোজ, এএসআই আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আজম ও কনস্টেবল আল আমিন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ৭ সদস্য টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদ এর পুত্র মো. আবদুল গফুর (৩২) কে কক্সবাজার শহরের ‘আল গণি’ হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করে টেকনাফ নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা এ সময় অপহৃত মো. আবদুল গফুরকে মারধর করে ‘ক্রস ফায়ার’ এ হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মো. আবদুল গফুরের স্বজনেরা ডিবি পুলিশের সদস্যদের ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেয় তারা।

পরে বিষয়টি মো. আবদুল গফুরের স্বজনেরা টেকনাফের লম্বরী সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে কর্মরত সেনা সদস্যদের জানায়। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে চেকপোস্টের সেনা সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করে ১৭ লাখ নগদ টাকা পান। এ সময় এসআই মো. মনিরুজ্জামান মাইক্রোবাস থেকে পালিয়ে গেলেও বাকী ৬ পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে তাকেও গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় মো. আবদুল গফুর বাদি হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর মুক্তিপণ আদায়কারী ৭ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে ফৌজদারী দ- বিধির ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ ধারায় টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর উল্লেখিত ৭ পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আসামিরা পুলিশ সদস্য হয়েও উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণ পায়নি। এজন্য আসামিদের নৈতিকতাবোধ ও শিষ্টাচারের যথেষ্ট অভাব থাকায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের দিকে তারা ধাবিত হয়েছে। বিচারক বলেন, পুলিশ সদস্যের দৃঢ় মনোবল, নৈতিকতা ও সেবাধর্মী মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হওয়া দরকার। এজন্য পুলিশ সদস্যদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য, প্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আসামিদের অধিকতর কম বয়স, সকলে এখনো তরুণ বিবেচনায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের অপেক্ষাকৃত কম সাজা প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী, সকল তথ্য, উপাত্ত যথাসময়ে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আদালত স্পর্শকাতর এ মামলাটি যথাযথ রায় ঘোষণা করতে পেরেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনায় আরো ছিলেন সাবেক পিপি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। আসামিদের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শামছুল আলম কুতুবী, অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার দাশ ও অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম চৌধুরী।