নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ের প্রায় দুশত বছরের পুরোনো ইছামতি মেলা গত বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকে বৃষ্টি থাকলেও তা উপেক্ষা করে মেলা ও মন্দির প্রাঙ্গণে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে পূজা হলেও হয়নি ঐতিহ্যবাহী মেলা। তাই এ বছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তা অনুষ্ঠিত হলো। কথিত আছে, ইছামতি মায়ের মন্দিরে যে কেউ নিয়ত করে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়।
মেলা আয়োজনে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ৭ বৈশাখ ইছামতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাদ্যযন্ত্রের মধুর শব্দে পুরো মেলা প্রাঙ্গণে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রায় সবধর্মের লোকের সমাগম ঘটেছে মেলায়। সারাদিন চলে পূজা-অর্চনা। মেলায় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থী ছুটে আসে। অনেকে নিয়ত করে মন্দিরের পাশে অবস্থিত বটগাছের গায়ে সুতো জড়িয়ে দেয়।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব গোবিন্দপুরে অবস্থিত ইছামতি মন্দিরের সেবায়েত গোপালচন্দ্র নাথ বলেন, গত ১০ বছর আগেও মেলা উপলক্ষে বলিখেলার আয়োজন করা হতো। কিন্তু বলির সংকট হওয়ায় বলিখেলা বন্ধ হয়েছে। গত কিছুদিন আগে প্রায় ১১০ বছর বয়সে মারা যান গোবিন্দপুরের বলি যচিন্দ্র। আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ভক্তেরা এলেও এখন আর আসে না।
সরেজমিনে ইছামতি মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও দমকা বাতাস উপেক্ষা করে মন্দির প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে। করা হয়েছে ডেকোরেশন ও আলোকসজ্জা। মন্দিরের পাশের জমি ও ইছামতি ছরার পাড়ে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, তিনি প্রত্যেক বছর ইছামতি মেলায় স্টিলের পণ্য বিক্রি করার জন্য আসেন। বিক্রিও হয় ভালো। মেলার দক্ষিণ পাশে বসেছে কাঠের তৈরি পণ্যের দোকান। এদের একজন সুনীল সূত্রধর। তিনি জানান, সকালে বৃষ্টির কারণে মানুষজন কম হবে। কিন্তু বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করে।
ইছামতি মেলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সুমন দত্ত বলেন, ইছামতি মেলাটি প্রায় ২শত বছর ধরে চলে আসছে। গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে মেলা বন্ধ থাকায় এ বছর মানুষের ঢল নেমেছে। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে এলাকার সবাই সহযোগিতা করেছে। মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুবল সিনহা বলেন, ইছামতি মেলার নিরাপত্তায় পুলিশের একটি টিম সার্বক্ষণিক ছিল। মেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।