বিষাদকালের হোক অবসান : নববর্ষ সমৃদ্ধি ও গৌরবের হোক

বিশ্বব্যাপী অপূরণীয় ক্ষতির বোঝা টানতে-টানতে ২০২০ খ্রিস্টীয় বর্ষটি বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। আজকের রক্তিম সূর্যাস্তের মাধ্যমে তার চিরসমাধি রচিত হবে মানুষের ইতিহাস থেকে। আরেকটি নতুন প্রভাতের কাছে সে বুঝিয়ে দেবে তার দায়ভার।
বিগত এই বছরটি বিশ্ব পরিসরে ত্রাস ছড়িয়ে মধ্য মার্চ থেকে আমাদের দেশেও মৃত্যুচিন্তা আর মৃত্যুভীতির বিভীষিকা ছড়িয়ে দেয় করোনা ভাইরাসের সংক্রামক ছোবলের আতিশয্যে। এই অদৃশ্য শত্রুটি কেড়ে নেয় এদেশের ৭ হাজারের অধিক সন্তানের প্রাণ, সংক্রমিত করে ৫ লক্ষাধিক মানুষকে।
আমরা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সকল প্রাণের মাগফিরাত কামনা করি। পাশাপাশি এও স্মরণ রাখতে হয় যে, জনসেবায় সরকারের সুচিন্তিত সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য পালনে যথোচিত তৎপরতা, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে চিকিৎসক সমাজের মরণপণ লড়াই, দেশদরদি কৃষক সমাজের ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা ইত্যাদি ইতিবাচক পদক্ষেপ দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ ও ব্যাপক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে, এমনটি বলতেই হবে।
বিদায়ী বছরটি আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্ববাসীকে আতংকের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল বললে অত্যুক্তি হবে না। মহাশক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিজয়ী প্রার্থীকে তাঁর ক্ষমতারোহনে যেরূপ বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, বিশ্ব ইতোপূর্বে এমন নৈরাজ্যিক সংস্কৃতি দেখেছে বলে মনে হয় না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গাঁয় মানে না আপনি মোড়ল’ গোছের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ খোদ আমেরিকাতেও বিপুল প্রত্যাখ্যানের পরিসর রচনা করলেও ট্রাম্পের গোঁয়ার্তুমির রেশ যেন শেষই হচ্ছে না। ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের সহনশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতিই ভবিষ্যত পৃথিবীর তিলকরেখা হয়ে উঠবে, বিশ্বমানবের এই আকাক্সক্ষা ফলপ্রসূ হবে নতুন বছরের প্রভাতে, এই প্রত্যাশা খুব বেশি কিছু নয়। কারণ, মানবজাতির অগ্রগমনের ইতিহাস সেই সত্যকেই নির্দেশ করে বারবার, কোনো ব্যক্তিবিশেষের একরোখামিকে নয়।
নতুন বছরটি আরেকটি আলোকিত বিষয়ের গৌরবদীপ্ত সঙ্গী হয়েছে আমাদের। সেটি হলো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের (১৯২০-২০২০) শুভলগ্ন। করোনাকালের দুর্যোগ এই অমর, শালপ্রাংশু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে স্মরণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলেও তা অচিরেই বাঙালির যৌথ প্রাণের শক্তির কাছে হার মেনে গেছে। আগামী বছরের শুরু থেকে নতুন তাৎপর্যে, নতুন মহিমায়, নব নব গ্রন্থের সম্ভারে, গানের ভুবন ও সাইবার জগতে পরিব্যাপ্ত মূল্যায়নের ডালিতে জাতির পিতা বিশ্বসভায় উজ্জ্বলতম নক্ষত্ররূপে অধিষ্ঠিত হয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষের সৌন্দর্যকে প্রতিভাত করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের মনের, আমাদের প্রাণের। এবং বিশ্ববাসীর।
নতুন ইংরেজি নববর্ষ দুনিয়ার ঘরে-ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি, আনন্দ ও নির্ভয়-নিরাপত্তার বাতাবরণ সৃষ্টি করুক। মানুষের দুর্বার অগ্রযাত্রাকে মহিমাম-িত ও সফলতার সম্ভারে ভরিয়ে দিক।