বাংলায় ‘ভালো থেকো’ ছবিতেই অভিষেক বিদ্যার

সুপ্রভাত ডেস্ক :
বলিউডের নায়িকা বিদ্যা বালান হলেও পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র জগতে পা দিয়েছিলেন তিনি বাংলা ছবির মাধ্যমে। ছবির নাম ছিল ‘ভালো থেকো’। ওই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তাকে প্রথম শট নিতে হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরবর্তীকালে বিদ্যা বালান জানিয়েছিলেন, সেইদিন প্রথম শটটি নেওয়ার আগে খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন যেহেতু ‘দ্য লেজেন্ড’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অভিনয় করতে চলেছেন। কিন্তু একবারই শট নিয়েই ওকে হয়ে ছিল। ছবিতে বিদ্যা বালানের জ্যাঠামশাই ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
‘ভালো থেকো’ হল পরিচালক গৌতম হালদারের নির্দেশিত বাংলা চলচ্চিত্র। এই ছবিটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জন্মদিন’ গল্পটি অবলম্বন করে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। বিদ্যা বালানের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল এই ছবিটির মাধ্যমে। ছবিটিতে অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, জয় সেনগুপ্ত, দেব শংকর হালদার প্রমুখ। ৫১ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ, শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রহণ এবং বিশেষ জুরি পুরস্কার লাভ করেছিল। তাছাড়া বিদ্যা বালান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে আনন্দলোক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১ জানুয়ারি ছিল বিদ্যা বালানের জন্মদিন। তিনি এবার তার ৪২ তম জন্মদিনে কোনও রকম কোনও পার্টি রাখছেন না বলে জানা গিয়েছে। তার বদলে এবার এই দিনটি তিনি তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। তবে অভিনেত্রী হিসেবে সাফল্য পাওয়ার আগে তাকেও নানাভাবে বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
বিদ্যা বালানের ছোটবেলা কেটেছে মুম্বাই শহরে। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। তবে ছাত্রী অবস্থায় অভিনয় শুরু করেন ছোটপর্দার মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালের মাত্র ১৬বছর বয়সে একটা কাপুর পরিচালিত হাম পাঁচ এর মাধ্যমে প্রথম অভিনয় এসেছিলেন। সেখানে মৌসুমী রাধিকা নামে এক তরুনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ওই ধারাবাহিকে সাফল্যের পর চলচ্চিত্রে প্রবেশের দিকে মন দেন। যে জন্য সেই সময় অনুরাগ বসুর নির্দেশিত টেলিভিশন সোপ অপেরার অফার ফিরিয়ে দেন।
স্নাতক স্তরে পড়াকালীন বিদ্যা মালায়ালাম ছবি চক্রম-এ মোহনলালের বিপরীতে অভিনয় করার সুযোগ পান।
তখন আরও ১২ টি মালায়লাম ছবিতে কাজ করার জন্য চুক্তি সই করেছিলেন। কিন্তু কিছু নির্মাণ জটিলতায় ওই চলচ্চিত্রগুলি তখন আটকে যায়। মোহনলালের মতো অভিনেতার ছবি আটকে যাওয়ায় সেখানকার প্রযোজকরা বিদ্যা বালানকে খুব একটা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেন না। তাদের তখন মনে হয়েছিল এই মেয়েটি অপয়া। এরপর তিনি তামিল ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েও নানাভাবে বাধার মুখে পড়েন। অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে বাদ দেওয়া হয়। ফলে শেষমেষ ২০০৩ সালে ‘ভালো থেকো’ ছবিটিতে অভিনয় করেই বড় পর্দায় আবির্ভাব ঘটে তার। তবে শুরুতে চলচ্চিত্র কর্মজীবনে নানাভাবে ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও তিনি তখন টেলিভিশন বিজ্ঞাপন এবং মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেন। ইউফোরিয়া এবং শুভা মুদগালের মিউজিক ভিডিওতে তাকে দেখতে পাওয়া যায়।
২০০৫ সালে প্রদীপ সরকার পরিচালিত পরিণীতা ছবিতে ললিতা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিদ্যা বালানের হিন্দি ছবিতে প্রবেশ। তার বিপরীতে নায়ক শোয়েফ আলি খান। বিদ্যা এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নারী অভিষেকের বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান ।এর পরের বছর ২০০৬ সালে রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’ ছবিতে সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে তাকে দেখা যায়। ছবিতে জাহ্নবী নামে এক রেডিও জকির ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভিনয়ের প্রয়োজনে তখন তিনি এমন কাজে নিযুক্ত এক দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের কাজটা রীতিমতো পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ছবিটি ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল। ২০০৭ সালে মনিরত্নম পরিচালিত গুরু ছবিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা বালান। সেখানে তিনি মাল্টিপল সেক্লরোসিসে আক্রান্ত এক নারী।
তবে সেটি পার্শ্বচরিত্র হলেও সমালোচকদের কাছে দাগ কেটেছিল।
তবে বিদ্যার ক্যারিয়ারের ‘পা’ ছবিতে অভিনয় আলাদা একটা মাত্রা দিয়েছিল। তিনি ওই ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সাফল্যের পাশাপাশি ওই ছবি তার কর্ম জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। আবার পরবর্তীকালে বিতর্কিত ভারতীয় অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনী অবলম্বনে তৈরি দ্য ডার্টি পিকচার ছবিটি রীতিমতো আলোড়ন ফেলে ছিল। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার সহ সেরা অভিনেত্রী তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ছয়টি স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল।
আবার সুজয় ঘোষ পরিচালিত কলকাতাকে পটভূমি করা থ্রিলার ছবি ‘কাহানি’তে অভিনয় করে রীতিমতো প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ২০১৭ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বেগম জান’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা বালান।
বিভিন্ন ভাষাতেই তিনি ছবি করেছেন।অভিনয় জীবনে তিনি একটি জাতীয় পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং পাঁচটি স্ক্রিন পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৪ সালে তাকে পদ্মশ্রী খেতাব দেওয়া হয়।