ফুল হাতে বিক্ষোভ করে যেসব দেশ

সুপ্রভাত ডেস্ক :
ফুলের ব্যবহার বিশ্ব জুড়েই। ফুল দিয়ে শুধু কি প্রেম নিবেদনই করা হয়? মোটেও না। ভালোবাসা, ভালোলাগা, পূজা কিংবা মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও ব্যবহৃত হয় ফুল। কখনো বা এটি ব্যবহৃত হয় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ বা বিপ্লবে। শুধু অস্ত্রই নয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ফুল হাতে নিয়েও হয় প্রতিবাদ বা বিপ্লব। তেমনই কয়েকটির বিবরণ এখানে দেয়া হলো-
২০০৩ সালে গোলাপ বিপ্লবের কারণেই জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট এডুয়ার্ড শেভার্দনাদজে গদি ছাড়েন। শেভার্দনাদজের বিরুদ্ধে সেই সময় একটি স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, আমাদের শত্রুর গায়েও আমরা বুলেটের বদলে গোলাপ ছড়াব।
২০০৫ সালে নির্বাচনের পর কিরগিজস্তানের রাষ্ট্রপতি আকায়েভের অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদের ঢল নামে। আকায়েভের বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতীক টিউলিপ হয়ে ওঠে প্রতিবাদেরও প্রতীক। ২০১০ পর্যন্ত অচলাবস্থা চলার পর কিরগিজস্তান একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবুও থামেনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও অন্যভাবে মতপ্রকাশকে বাধা দেয়ার চেষ্টা।
ফুলের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখেও বেশ কয়েকটি বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের নামকরণ হয়েছে সোভিয়েত-পরবর্তী দেশগুলোতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউক্রেনের কমলা রং বিপ্লব। এর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রেক্সাপটে অ্যামেরিকায় ফুল হাতে পথে নামে হিপিরা। অন্যদিকে লাল গোলাপ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পছন্দের প্রতীক।
ফুল সবসময় যে প্রতিবাদীদের হাতেই উঠবে তা ঠিক নয়। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে প্রতিবাদীদের শান্তির বার্তা দিতে পুলিশকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের লাল গোলাপ দেন। তবে একদিকে সরকার পক্ষে থাকা লাল শার্ট গোষ্ঠী ও বিরোধী মতের হলুদ শার্ট গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলমান থাকাকালীন সামরিক বাহিনীর হাতে যায় শাসন ক্ষমতা। ২০১৪ সাল থেকেই এরপর জারি থাকে সামরিক আইন। প্রতিবাদ হয় ব্যর্থ।
২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর পুনর্নির্বাচনের প্রতিবাদে রাজধানী মিনস্ক জনতার প্রতিবাদে। প্রতিবাদী জনতার ওপর পুলিশ হামলা চালালে আরো বাড়তে থাকে ক্ষোভ। বেলারুশের নারীদের দেখা যায় সাদা পোশাক ও হাতে ফুল নিয়ে মিছিল করতে। রাজধানীর পথে ফুল হাতে মানববন্ধন করে শান্তির বার্তা দেন তারা।
একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে আজো গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। ২০১৩ সালে গৃহযুদ্ধের চরম পরিস্থিতির সময়ের এক ছবিতে দেখা যায়, সিরিয়ান কুর্দিশ পপুলার প্রোটেকশন ইউনিটসের এক যোদ্ধার বন্দুকে গোঁজা আছে গোলাপ। যা যুদ্ধবিরতির প্রতীক। তবে সাত বছর কেটে গেলেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই সিরিয়ায়।
আরব অভ্যুত্থান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১১ সালে চীনেও শুরু হয় গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভ। অংশগ্রহণকারীরাও টিউনিশিয়ার আদলে হাতে তুলে নেন জুঁইফুল। এর উত্তরে চীনা কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ করে জুঁই ফুল বিক্রি। শুধু তাই নয়, ইন্টারনেটে জুঁইফুল লিখে সার্চ করার ওপরেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।
টানা পাঁচ দশক ধরে পর্তুগালে ছিল সামরিক শাসন। বিরুদ্ধ মতের ফলে সেন্সরশিপ বা নাগরিকদের ওপর অসহনীয় অত্যাচার ছিল তৎকালীন নেতৃত্বের দৈনন্দিন চর্চার অংশ। ১৯৭৪ সালে সামরিক বাহিনীর ভেতর থেকেই ওঠে প্রতিবাদী স্বর। কোনো ধরনের খুনোখুনি ছাড়াই বদল আসে পর্তুগালে। তৃতীয় পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিপ্লবের উদযাপন করতে পর্তুগিজরা বেছে নেন লাল কার্নেশন ফুল।
টিউনিশিয়ার জাতীয় ফুলের নামেই এই বিপ্লবের নামকরণ। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিবাদী জনতার চাপে রাষ্ট্র নেতা জিনে এল আবিদিন বেন আলি ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এই শাসক পরে বিক্ষোভকারীদের চাপে সৌদি আরবে পালিয়ে যান।
টিউনিশিয়ার অভ্যুত্থানের পর একে একে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে বিপ্লবের আঁচ। মিশর, সিরিয়া, লিবিয়ার পাশাপাশি উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশেও দেখা যায় এই ধারা। অন্যান্য দেশেও সরকার পতন হয় অনেকটা টিউনিশিয়ার ধাঁচেই। সব জায়গাতেই দেখা যায় ফুলের ব্যবহার। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।