প্রকৃতিই ঠেকালো বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে আতঙ্ক ছিলো উপকূলে। মায়ানমারে মূল আঘাতের বিষয়টি স্পষ্ট হলেও ঝড়ো বাতাসে টেকনাফসহ চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার শঙ্কা ছিলো আবহাওয়াবিদদের। কিন্তু গতকাল রোববার দুপুরে মোখা উপকূলে আঘাত করলেও তা ভয়াবহ ছিল না।

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার উপকূল অঞ্চলে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও চট্টগ্রামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এ নিয়ে আবহাওয়াবিদরা জানান, গতকাল (রোববার) সকালে মোখা গতিপথ পরিবর্তন করায় ও ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আসার সময়ে জোয়ার না থাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে। বিগত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়গুলো পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোতে হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোতে না হওয়াও দুর্বল হওয়ায় অন্যতম কারণ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছিতে ঘণ্টায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসে। কিন্তু রোববার সকাল ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপথ পাল্টে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সামান্য দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে কিছুটা প্রভাব পড়ে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের দক্ষিণ ও পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে। সেখানে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে তিনজন আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।

তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড়টি টেকনাফ ও উখিয়ার ওপর দিয়ে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে গেছে। এতে টেকনাফ ও উখিয়ায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজারের সব উপজেলা মিলিয়ে যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা হয়েছে সেখানে প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ১০ হাজারের মতো ঘরবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব নেই। ’
একই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি। এখন মোখার গতিপথ পরিবর্তন করে সরে গেছে বলে জেনেছি। আল্লাহর রহমতে চট্টগ্রাম সেইফ আছে।’

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয় আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যার কাছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফ এবং মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রে আঘাত করেছে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি সরে যায়। ফলে এখন আর কোনো শঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড়টি সকালে গতিপথ পরিবর্তন করায় এবং ওই সময়ে ভাটা থাকায় এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বলা যায়, প্রকৃতিই এ প্রাকৃতিক বির্পযয় থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। তবে ঢাকা অফিস থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।’