পোশাক খাতের ব্যয় বাড়ার ভার বহনের সক্ষমতা নেই

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমই সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক »

‘গার্মেন্টস শিল্পে উন্নয়ন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনবল প্রয়োজন। তাই আমরা চট্টগ্রামে ফ্যাশন টেকনোলজির বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি)’ চালু করেছি। এছাড়া গার্মেন্টেসের নারী কর্মীদের জন্য উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। এশিয়ান ফর উইমেন ইউনিভার্সিটির সঙ্গেও আমাদের একটি এমইউও (চুক্তি) স্বাক্ষর হয়েছে। পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ৫০০ নারীকর্মীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। মেয়েরা পরিবারের আর্থিক চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে ও দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে ওঠবে। তাদের পড়াশোনা চলাকালে তার বেতনও পেয়ে যাবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, থাকা, খাওয়া সব ফ্রি।’
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর ঝাউতলাস্থ বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) ভবনের মাহাবুব আলী হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন।
পোশাকশিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ক্রমবর্ধমান কমছে। এছাড়া সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি ঘনমিটারের গ্যাসের মূল্যে ২০২২ সালের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সরকার আবাসিক, সার ও চা উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ছাড়া অন্যখাতে গ্যাসের ১৪ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে যা কার্যকর হবে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে ৮৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হবে। বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে এই দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই ভার বহনের সক্ষমতা নেই।’
সরকারের ব্যবসাবান্ধব পলিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার বেনাপোলের পাশাপাশি ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যেমে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে পার্শিয়াল শিপমেন্টের (আংশিক চালান) জটিলতা নিরসন করে আদেশ জারি করেছে। এতে করে শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লিখিত স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পার্শিয়াল শিপমেন্টে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে পারবে। ফলে দ্রুততার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি সম্পাদন করা যাবে। সরকারের এ পদক্ষেপ শিল্পকে আরও গতিশীল করবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যের অবাধ বিচরণে কোন প্রতিবন্ধকতা কাম্য নয়।’
প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ২০২২ সালে বাংলাদেশ পোশাকশিল্প রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির নতুন রেকর্ড গড়েছে এবং ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এর পেছনের কারণ হলো কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, পণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধির সুফল উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সবুজ শিল্পায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও ক্রেতারা তার যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন না।’
টেকসই হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে ক্রেতারা এখন নন-কটন পোশাক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টেক্সটাইল খাতের মধ্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে ম্যান-মেইড ফাইবারভিত্তিক ইয়ার্ন ও ফ্যাব্রিক্স। যেমন- পলিয়েস্টার, ভিনকস, স্প্যানডেক্স, মেলাঞ্জ। বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৬ শতাংশ, যেখানে ৭৫ শতাংশই আমরা রপ্তানি করি। টেকসই হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে ক্রেতারা এখন নন-কটন পোশাক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। নন-কটনেও আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদেরও সে ক্যাপাসিটি আছে। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা থাকা জরুরি। নন-কটন বস্ত্র ও পোশাকখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ স্কিম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ২০২৯ পরবর্তী সময়ে ডাবল ট্রান্সফরমেশন রুলস প্রতিপালন করে জিএসপি প্লাস এর জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারবো।’
২০৪০ সালের মধ্যেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক-দুই দশকে এক ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে এ দেশ। গত ছয় বছরে দেশের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেটি যদি ৫ শতাংশেও নামে, তাতেও ২০৪০ সালের মধ্যেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আর প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হলে ২০৩০ সালেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি রাকিবুল আলম, শাহিদুল আরিফসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।