পর্যটক সুবিধায় আনা গাড়ি নিলামে বিক্রির জট খুলেছে

বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার নিলামে ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা কিনেছেন সাইফ অটোমোবাইলসের কর্ণধার মো. সাইফুদ্দিন।

বিক্রি হলো দুটি বিএমডব্লিউ ও একটি ল্যান্ড ক্রুজার

সুপ্রভাত ডেস্ক »

পর্যটকদের বিশেষ সুবিধায় (কার্নেট ডি প্যাসেজ) আনার পর বন্দরে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে তিনটি নিলামে বিক্রি হয়েছে। এই তিনটি গাড়ির মধ্যে দুটি বিএমডব্লিউ এবং একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট’ (সিপি) মেলার পর বুধবার চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তিনটি গাড়ি ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেন।

নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা তিনজনের কাছে গাড়িগুলোর চাবি বুঝিয়ে দেন কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর এই তিনটিসহ ১১২টি গাড়ি নিলামে তুলেছিল। পরে ১৬ নভেম্বর ১১০ গাড়ির বিপরীতে সর্বোচ্চ দরদাতার নাম প্রকাশ করেছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার আল আমিন বলেন, “আগে নিলাম হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি পেতে সমস্যা ছিল। সেকারণে নিলাম হলেও গাড়ি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জটিলতা হতো।

“এটিসহ যেসব সমস্যা ছিল, তার অবসান হওয়ায় তিনটি গাড়ি সর্বোচ্চ দরদাতাদের নিকট হস্তান্তর করা গেছে।”

নিলামে অবিক্রিত বাকি ১০৯ গাড়ি আবারও নিলামে তোলা হবে জানিয়ে আল আমিন বলেন, সেখানে নতুন করে ক্রেতারা নিলামে অংশ নেবেন।

কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এনবিআর চেয়ারম্যানের তদারকির কারণে শেষ পর্যন্ত পর্যটক সুবিধায় আনা গাড়ি নিলামে বিক্রির জট খুলেছে।

“সামনে নিলামে যৌক্তিক মূল্য পেলেই গাড়ি বিক্রি হবে। এতে যেমন সরকারের রাজস্ব আদায় হবে তেমনি বন্দরে জায়গাও খালি হবে।”

কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধা, শুল্ক ফাঁকি এবং মিথ্যা ঘোষণায় আনার পর চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা ১১২টি গাড়ি ১৫-২০ বছর আগে আনা।

এর মধ্যে রয়েছে বিএমডব্লিউ ২৮টি, মার্সিডিজ বেঞ্জ ২৪টি, মিতসুবিশি ২৩টি, ল্যান্ডরোভার ১২টি, লেক্সাস ৯টি, টয়োটা ৪টি। এগুলোর জন্য সংরক্ষিত দর ছিল ১৮০ কোটি টাকা।

নিলামে বিক্রি হওয়া ২০০৬ সালে জার্মানিতে তৈরি বিএমডব্লিউ কার (দুই হাজার ৪৯৭ সিসি) ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর হেঁকেছিল চট্টগ্রামের নিমতলা এলাকার সাইফ অটো মোবাইলস।

গাড়িটি পেতে অগ্রিম আয়কর ও মূসকসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হল ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। নিলামে গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১ কোটি সাড়ে ২৯ লাখ টাকা।

বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ি কিনেছে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটের ফারজানা ট্রেডিং। ৫৩ লাখ টাকা দর দিয়ে গাড়িটি পেলেও মূল্য সংযোজন কর, অগ্রিম আয়কর মিলিয়ে তাদের দিতে হয়েছে ৬২ লাখ টাকা। ২০০৬ সালে তৈরি গাড়িটি তিন হাজার সিসির।

টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের অন্য গাড়িটি কিনেছে খুলনার সুপার জুট মিলস লিমিটেড। প্রায় ৪১ লাখ টাকা দর হেঁকে পাওয়া গাড়িটি ২ হাজার ৯৮২ সিসি’র।

বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার নিলামে কিনতে পেরে খুশি সাইফ অটোমোবাইলসের কর্ণধার মো. সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের এ গাড়ি কিনতে গেলে খরচ হতো ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কালো রঙের ২০০৬ মডেলের এ গাড়িটি লাখ টাকায় কিনতে পেরে আমি খুশি। কেবল নিজের শখ পূরণে কিনেছি এ গাড়ি। এ গাড়ি ছাড়াও গত নিলামে ১১টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলাম আমি।’

নিলামে কেনা বিএমডব্লিউ ২০০৭ মডেলের আরেকটি গাড়ি নিতে আসা ফারজানা গ্রুপের হাজি মো. সেলিম বলেন, ‘ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই নিলামে অংশ নিয়ে গাড়িটি নিয়েছি। চট্টগ্রামে এসব গাড়ি নেই। এতে বিদেশি অতিথিরা এলে বিপাকে পড়তে হয়। গাড়িটির আরও প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার কাজ করতে হবে।’

বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা। সাধারণত পর্যটক-সুবিধায় গাড়ি আনলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, তবে তা আবার ফেরত নেওয়ার শর্তও থাকে। অতীতে এ সুবিধায় আনা অনেক গাড়ি ফেরত নেয়নি।

সূত্র : বিডিনিউজ ও নিউজ বাংলা

বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার নিলামে ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা কিনেছেন সাইফ অটোমোবাইলসের কর্ণধার মো. সাইফুদ্দিন।