নির্বাচনী প্রচারে মুত্যুর ঘটনা দুঃখজনক

আগামী ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলার প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে জমজমাটভাবেই। কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়নপ্রাপ্তরা ছাড়া নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে কাউন্সিল পদে প্রায় ৯০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী তৎপর রয়েছেন। এখানে ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২২৯জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা মূল প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। এই পাল্টাপাল্টি তৎপরতা কখনো-কখনো সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আহত-নিহত হবার ঘটনাও ঘটছে।
গত মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) এ রকম এক সংঘর্ষে বুকে গুলি লেগে নিহত হয়েছেন আজগর আলী বাবুল নামে এক ব্যক্তি। তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক। আজগর আলী বাবুল মোগলটুলী কাটা বটগাছ এলাকার বাসিন্দা। নগরীর ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে। এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরাই এ হত্যার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ উঠেচে। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং তার বিপক্ষে আছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের। শেষের জন ২০১৫ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর ছিলেন। এবার দল তাকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীরূপে সক্রিয় আছেন।
নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। পাল্টাপাল্টি শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের প্রয়োজনে বাকবিত-াও থাকবে। কিন্তু সেখানে অস্ত্রের ব্যবহার কীসের আলামত? বিদ্রোহী প্রার্থী এবং মনোনীত প্রার্থী, এই বাজে কালচার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরে আসতে হবে। কঠোরভাবে এখানে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হলে রক্ত ঝরবেই। ঝরছেও। পাঠানটুলি এলাকায় যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। এ ধরনের সহিংস ঘটনা যে এখানেই প্রথম ঘটলো, তা নয়। সারাদেশেই কী সাধারণ নির্বাচন, কী স্থানীয় নির্বাচন এলেই এ ধরনের রক্তপাতে থকথকে হয়ে ওঠে মাটি। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে প্রথমত রাজনৈতিক দলগুলোকেই। বিশেষ করে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ নামক অপসংস্কৃতিটি অবশ্যই বিসর্জন দিতে হবে রাজনীতির অভিধান থেকে।
প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনই এখন সকল দিকের তত্ত্বাবধানকারী আইনি ও সাংবিধানিক সংস্থা। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচনী পরিবেশ যেকোনোভাবে অশান্ত হলে মানুষ ভোটকেন্দ্রমুখী হবে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর হতে হবে আইন প্রয়োগে। এখন থেকেই প্রত্যেক ওয়ার্ডে তাদের ভ্রাম্যমাণ টিমের টহল জোরদার করতে হবে। আর নির্বাচনী বিধান ও প্রবিধানের প্রতি সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আন্তরিকতা থাকতে হবে সর্বোচ্চ মাত্রায়।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আবির্ভূত হতে হবে।