পাহাড়ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু

৪০ বসতি উচ্ছেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারীবর্ষণে চট্টগ্রাম নগরে পাহাড়ধসে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহতেরা হলেন মো. সোহেল (৩৫) এবং তার সাত মাস বয়েসী মেয়ে বিবি জান্নাত। এ ঘটনায় আহত হয়ে আরও দুজন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গতকাল পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর জংশন এলাকায় আই-ডাব্লিউ কলোনিতে পাহাড়ধসের এ ঘটনা ঘটে। এদিকে আন্দরকিল্লা এলাকায় পাহাড়ের ওপরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অফিসের দেয়াল ধসে পড়ে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। রোববার সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৮টার দিকে এ দুস্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, ষোলশহর জংশন এলাকায় আই-ডাব্লিউ কলোনিতে একটি টিনের ঘরের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে একই পরিবারের চারজন পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে। এ সময় স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পরে জরুরি সেবায় (৯৯৯) কল করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিস ও পাঁচলাইশ থানা পুলিশ পৌঁছায়। কিন্তু তার আগেই স্থানীয়রা চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ‘পাহাড়ের মাটি ধসে টিনের চালায় পড়লে সেখানে চারজন চাপা পড়ে। স্থানীয়রা ধসে পড়া মাটি থেকে চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

চমেক হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘সকালে পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আন্দরকিল্লার একটি পাহাড়ের ওপরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিসের দেয়াল ধসে পড়ে। এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়সার বলেন, ‘ওখানের দেয়ালটা পরোনো হয়ে গেছে। তাই অতিবৃষ্টিতে দেয়ালটি ভেঙে নিচে পড়ে যায়। তবে এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা ইতোমধ্যে দেয়ালটি পুনর্নির্মাণের কাজ করছি। পরবর্তীতে আর কোনো সমস্যা হবে না।’

পাহাড়ধসের ঘটনায় টনক নড়েছে জেলা প্রশাসনের। গতকাল দুপুর দেড়টায় ষোলশহরের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ বসতিতে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের জিনিসপত্র সরানোর জন্য সময় চাইলে তাদের এক ঘণ্টা সময় দিয়ে দুপুর আড়াইটায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চান্দগাঁও সদর ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার মাসুদ রানা। অভিযানটি দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি বসতি উচ্ছেদ করা হয়। ২৫০ অবৈধ বাসিন্দাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে মৃতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও দুপুরে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে সরে যেতে মাইকিং করা হয় আকবর শাহ থানার ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, বিজয় নগর, টাংকির পাহাড় ও শান্তি নগর পাহাড়ি এলাকায়। এতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করে যুব রেড ক্রিসেন্ট, তৃণমূল সমাজের সাংস্কৃতিক ও যুব উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরা।