জ্বলেনি রান্নার চুলা

খাবারের বাড়তি দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

পড়ালেখা কিংবা চাকরি করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শহরে এসে বসবাস করেন ব্যাচেলররা। এই সংখ্যাটা চট্টগ্রামেও কম নয়। পরিবারের কাছ থেকে দূরে এসে তাদের অধিকাংশেরই অস্থায়ী আবাস হয় মেসগুলোতে। মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভোগান্তি পেতে হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ভাড়ায় থাকা ব্যাচলরদের।

চট্টগ্রাম কলেজের মাস্টার্স শেষবর্ষের শিক্ষার্থী শিলা চাকমা। গ্যাস সংকটের ভোগান্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৩ মে রাতে গ্যাস থাকায় ভাত রান্না করি। সেই ভাত আজ সকাল (১৪ মে) পর্যন্ত ছিলো। কিন্ত শেষ হয়ে যায় তরকারি। আর তরকারি রান্না করতে গিয়েই দেখি গ্যাস আসছে না। গ্যাসের অল্প প্রেসার থাকায় তা দিয়ে তরকারি রান্না করা অসম্ভব ছিলো। এদিকে হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় বাইরে থেকেও খাবার আনতে পারছি না। পরে বাসায় যে কটা পত্রিকা ছিলো তা চুলায় পুড়ে ডিম ভাজি করে দুপুরের ভাত সেরে নিই। শুনেছি আরও ৪-৫ দিন লাগবে গ্যাসের লাইন স্বাভাবিক হতে। এতদিন কি খাব তার কোনো ঠিক ঠিকানা এখনো নেই।’

চট্টগ্রাম মহিলা কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মার্সি রহমানের রান্নার ধরন আরও করুণ। তিনি জানান, ১৩ মে থেকে তাদের বাসায় গ্যাস ছিলো না। ‘সেদিন সারাদিন ভাত খায়নি। বাইরে থেকে এনে নাস্তা খেয়ে দিন কাটিয়েছি। আজ (রোববার) দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য পাশের এক হোটেলে গিয়ে দেখি তরকারি শেষ। শুধু ভাত কিনেই বাসায় ফিরি। কিন্তু খালি ভাত তো আর খাওয়া যায় না। মাটির চুলোয় আগুন ধরিয়ে আলু ভাজি করে খেয়ে ফেলি। আগে ছিলো পানি বিদ্যুতের সংকট। এখন যোগ হয়েছে গ্যাসের সংকট। নগরী একেবারে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে।’শুধু ব্যাচেলর নয়, গ্যাস সংকটে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরীর সবাইকেই।

জানা গেছে, গ্যাস সংকটে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীরা বাসা-হোটেলে রান্নার সুযোগ পেলেও বেকায়দায় পড়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর গ্রাহকরা। ফলে অনেককেই এলপিজি গ্যাস, লাকরি দিয়ে রান্না চালিয়ে নিয়ে হয়েছে।

এদিকে গতকাল বাসা বাড়িতে রান্না করতে না পারায় অনেকেই খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছিলেন। আর এ সুযোগে খাবারের দাম বাড়িয়ে দেন হোটেল মালিকরা।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে দোকানগুলোতে ভিড়। ৭ টাকার পরোটা ১২টাকা, ১০ টাকার সিঙ্গারা ১৫ টাকা, ভাজি, নানরুটি, সমুচা, হালুয়াসহ সকালের নাস্তা ৪-৮ টাকা বেড়ে যায়। অন্যদিকে ভাত আগে ১৫ টাকায় পাওয়া গেলেও গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। এছাড়া শাক ভাজি ৩০ টাকা, মুরগী ১ পিস ৭০ টাকাসহ বিভিন্ন খাবারের ১০ থেকে -৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে গ্যাস সংকট কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে এ প্রসঙ্গে কথা হয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) দক্ষিণ বিপণনের মহাব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক হতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে। সেটা আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। আজ (১৫মে) থেকে গ্যাস লাইন ঠিক করার কাজ চলবে। দ্রুত সমস্যা লাঘব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় জাহাজে করে যে তরল গ্যাস আনা হচ্ছে সেগুলো পিউরিফাই করে রান্নার উপযোগী করতে অর্থাৎ রান্নার উপযোগী বা পাইপ লাইন দিয়ে সরবারাহ করতে এক সপ্তাহ দরকার পড়বে। যে গ্যাস আমাদের স্টকে ছিলো তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়েছে। আামদের তো দুটোই দরকার বিদ্যুৎ এবং গ্যাস।’