জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ : ‘সকল জাতির সুরক্ষা একসঙ্গে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারির সংকট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই উল্লেখ করে করোনার ভ্যাকসিন সকল দেশ যাতে সময়মতো ও একসঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে কেউই নিরাপদ নয়, টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলেও তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জানান। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকট মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। করোনার সময় সংকটে পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সহমর্মিতা ও ন্যায়ানুগ বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলির প্রতিও তিনি আহ্বান জানান। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের নানা দেশে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি সদস্যরা সর্বাধিক সংখ্যায় দায়িত্ব পালন করছে। এই সুমহান দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের ১৫০জন শান্তিরক্ষী সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
করোনা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে প্রধান মন্ত্রী বলেন, করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব, পুষ্টি নিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য বাজারজাতকরণে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে তার সরকার। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার নেতৃস্থানীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ এবং এসব সংস্থায় বাংলাদেশ সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শান্তি ও নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ, শিশুদের উন্নয়ন ও তাদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে প্রধান মন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক এক ভার্চুয়াল গোল টেবিল আলোচনায়ও অংশগ্রহণ করেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব সমস্যার প্রতি শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সোচ্চার হতে হবে। এটি কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ। চীন ও আমেরিকার বর্তমান ¯œায়ুযুদ্ধ জাতিসংঘকে দুর্বল করবে, বিশ্বব্যাপী নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতিসংঘ মানবজাতির ভরসাস্থল, বাংলাদেশের উন্নয়নে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংস্থা সমূহের সহযোগিতা রয়েছে।
এর আগে জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশেষ অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুস্পষ্টভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরির জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন কোনো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুমোদন দেওয়া উচিত নয় বলেও প্রধান মন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন। করোনার এই সময়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশেরই প্রয়োজন জাতিসংঘের-এ কথাও শেখ হাসিনা সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।