জলাবদ্ধতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

ডেঙ্গু মৌসুম সতর্কতা

সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ পুরো বর্ষা মৌসুমেই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য উদ্ধৃত করে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে ৩৯২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, রাজধানী ঢাকাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি। জুন মাসেই বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর বিস্তার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে এমনই শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

ডেঙ্গুৃর বিস্তার রোধে মশক নিধন কার্যক্রম প্রধান আর এর দায়িত্ব প্রধানত সিটি কর্পোরেশনের। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আর এই মশা বদ্ধ-স্বচ্ছ পানিতে বংশ-বিস্তার করে। এ জন্যে শহরে কিংবা গ্রামে বাড়ির আশ-পাশ পরিষ্কার রাখা, কোথাও যেন পানি  দুই/তিনদিনের বেশি জমে না থাকে, সেদিকে বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়া, বসবাসকারীদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরে বর্র্ষামৌসুমে জলাবদ্ধতা ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই অলি-গলি, রাস্তায়, বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। বদ্ধ জায়গা, নালানর্দমা ভরাটের ফলে পানি আটকেও থাকছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা গ্রাম ও শহরতলীর মিশ্রণ, এসব এলাকার অধিকাংশই মশা প্রজননের উৎকৃষ্ট স্থান। বছরের পর বছর খাল-বিল-ডোবা-নালা-নর্দমা কচুরিপানা ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতা নানা রোগবিস্তারে সহায়ক। নিয়মিত জলাবদ্ধতায় পরিবেশ দূষণ ও এ থেকে মানুষের বিপন্নতা বর্ণনার অতীত। দশকের পর দশক মহানগরীর মানুষ এ ভোগান্তির শিকার।

নগরে বাড়ি-ঘর নির্মাণের সময়েও নানা স্থানে স্থানে পানি জমা থাকে, বিশেষত ছাদে ও ট্যাংকে। এ ব্যাপারে আবাসিক ভবন মালিক কর্তৃপক্ষ যাতে নির্মাণকালীন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের নজরদারি থাকা বাঞ্ছনীয়।

মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা  ডেঙ্গু মৌসুমকালে তেমন দৃশ্যমান নয়। এডিস মশার বংশ-বিস্তারের এই সময়টাতে মশক নিধন অভিযান জোরদার করতে হবে এবং তা অবিলম্বে। সেই সাথে নগরীর নালা নর্দমা, ডোবা বদ্ধ জায়গায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করতে হবে। এ লক্ষ্যে নগরবাসীর করণীয় সম্পর্কে চসিককে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চলমান কাজগুলি দ্রুত শেষ করে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে হবে।

করোনা মহামারির মধ্যে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের দেশে নানা কারণে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের বিস্তৃতি ঘটছে। আমাদের চিকিৎসা সেবা, রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার, জনগণের সহজে  স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি- এসব মনে রেখে সার্বিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনা উন্নত করা ছাড়া উপায় নেই।

বর্ষা মৌসুমে রোগ-ব্যাধি বেশি দেখা দেয়। করোনার এই মহামারির সময় তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন প্রশাসন এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে। প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে সচেষ্ট হওয়া।