জনগণ বিএনপির পক্ষে আছে

বিএনপির সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘১৪ বছর ধরে নির্যাতন করেও বিএনপিকে এতটুকু দমাতে পারেনি। জনগণ বিএনপির পক্ষে আছে। এই সরকার মেগা প্রকল্প করে মেগা দুর্নীতি করেছে। এই সরকার দেশকে অন্ধকারে রেখে, অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫ টায় কাজির দেউড়ির নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির মহানগর কার্যালয়ের সামনে ১০ দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যারা টাকা পাচারে জড়িত তাদের নাম সরকার মুখে আনছে না। কারণ তাদের লোকই এই টাকাগুলো পাচার করেছে। এইভাবে সরকার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ গরীব মানুষ দু’বেলা খেতে পারে না, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে এই অর্থনীতি ঠিক করা সম্ভব নয়। এই সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে।’
সরকার মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবারও গায়েবি মামলা শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই, আর কোনো গায়েবি মামলা হতে দেব না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যারা এই দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, সামাজিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সুশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাজই হচ্ছে গণতন্ত্রকে হত্যা করা আর বিএনপির কাজ হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আজকে সারাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। চট্টগ্রামে কিছুদিন আগে একটি উপনির্বাচন হয়েছে। সে উপনির্বাচনে ভোট দিয়েছে শতকরা মাত্র ১৪ ভাগ মানুষ। এটা লজ্জার বিষয়।’
মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ১০ দফা দাবিতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ ভিপি, কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও উত্তর জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ১০ দফার দাবিগুলো হচ্ছে- ১. বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্রহরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার / অন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, ৩. বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা, ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা, ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা, ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল, ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা, ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।