জনগণকেই বেছে নিতে হবে, তারা কী চায়: শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিজয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে নির্বাচনের এক বছর আগেই ভোটের কথা মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের শাসনামলে দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “এখন, জনগণকেই বেছে নিতে হবে তারা কী চান– উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না, বিএনপি-জামাত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ভাষণের শুরুতেই বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা জানান সরকারপ্রধান। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, “দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

‘অরাজকতা’ যারা সৃষ্টি করছে তাদের অতীত ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “এদের একটা অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যে সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল, সে কথাও ভাষণে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে। আরেকটি দল, যার জন্ম ও লালন-পালন সেনানিবাসে, সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উর্দি গায়ে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং অফিসারকে হত্যা করেছে।

“এদের প্রত্যক্ষ মদদে হরকাতুল জিহাদ, বাংলাভাই, জমায়িতুল মোজাহিদিন ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে। ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।”

২০১৪ সালের ভোটের আগে ও পরে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা দেশে বিএনপি-জামাত অগ্নি এবং পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন।

“এ সময় বিএনপি-জামাত জোট সন্ত্রাসীরা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ২৯টি ট্রেন, ৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।”

‘এদের কেন মানুষ ভোট দেবে’

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক জিয়ার প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থপাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আঅগা গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?

“দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামাত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।”

বিএনপি ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচন করার চেষ্টা চালায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির ‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে’ দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।

“এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামাত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

“২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না।”

গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক ‘নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে পেরেছে। দেশ এখন খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ,মাংস,ডিম,দুধ,সবজি,ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ‘ব্যাপক হারে’ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে,মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ শতাংশ। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।”

এ বছর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু উদ্বোধন এবং অনেকগুলো মহাসড়ক ৪ লেইনে উন্নীত করার কথা মনে করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য আমরা আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করেছি।”

‘সঙ্কটে ভয় নয়’

করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বেই যে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সে কথা ভাষণে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০২০ এবং ২০২১ – এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে।

“আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনাভাইরাস মহামারীর সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক যুদ্ধ।

“অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।”

সরকারপ্রধান বলেন, সরকারের ‘সময়োচিত’ পদক্ষেপে মহামারীর ধাক্কা সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ, পাল্টা অবরোধের কারণে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

“সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার; যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেত, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে।

“আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোন কোন দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি।”

চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়েছে। এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন। ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দামে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছেন। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে ‘গুজব’ ছড়ানো হচ্ছে বলে সতর্ক করে সেই গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।”

রিজার্ভ কমার যে আরও কারণ আছে, সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

“এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”

সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ শতাংশ হার সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হত, তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হত। আর তা পরিশোধ করতে হত রিজার্ভ থেকেই।

“আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ভাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।”

দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। অযথা গুজবে কান দেবেন না। বাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাই তার সরকারের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা তিনি কখনোই চান না।

“বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করব।”

সঙ্কট উত্তরণে উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি ঊর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি,এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।”

জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “সঙ্কট আসবে। সঙ্কটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারী সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।”

এগিয়ে যাওয়ার শপথ

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হল। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।

“এখনও এদেশে একাত্তরের ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধরেরা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।”

কিন্তু দেশের মানুষ এদের ‘চিনে ফেলেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র করে আর তাদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।”

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নিই, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করব।”