চেম্বারে যাওয়ার পথে ডাক্তারকে জরিমানা!

সাতকানিয়ায় ইউএনও’র বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া »
সাতকানিয়ায় চেম্বারে যাওয়ার পথে এক ডাক্তারকে জরিমানা করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানার শিকার ডাক্তারের নাম ফরহাদ কবির। শুক্রবার সন্ধ্যায় রোগী দেখার জন্য মোটরসাইকেলযোগে সাতকানিয়া পৌর এলাকায় চেম্বারে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তাকে জরিমানা করেন। এ ঘটনায় ইউএনও’র শাস্তি দাবি করেছেন চিকিৎসক নেতারা। তবে ইউএনও মো. নজরুল ইসলামের দাবি তিনি আইন বাস্তবায়ন করেছেন, কোনো অন্যায় করেননি।
সাতকানিয়ার মির্জারখীল এলাকার বাসিন্দা ডা. ফরহাদ কবির জানান, আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসী এবং মক্কা ফার্মেসীতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। এসময় ইউএনও’র সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার পরিচয় দিই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, “আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না।” এরপর ইউএনও’র সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে নেন। এক পর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনে বের হয়েছেন এর জন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া-আসায় বিধি-নিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে যান ইউএনও। তিনি বলেন, “আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।”
ডাক্তার ফরহাদ কবির আরো অভিযোগ করেন, অনেক লোকের সামনে ইউএনও ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দিই। এরপর ইউএনও বলেন, “সাংবাদিকরা ছবি উঠান, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে।” পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। জীবনে আমি কোনদিন এধরনের অপমান বোধ করিনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কীভাবে এমন খারাপ আচারণ করতে পারেন!
ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, “উনি যে ডাক্তার সেটাতো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপিল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭ টার পর পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকাতে জরিমানা করা হয়েছে।”
ইউএনও ডাক্তারের সাথে পরিচয়পত্র না থাকার কথা বললেও মামলায় ডাক্তার ফরহাদ কবির লেখা হয়েছে। মোটরযান আইন মামলা দেওয়ার কথা বললেও মামলায় অপরাধ হিসেবে দণ্ডবিধি ২৭০ ও ২৭১ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ধারায় বিদ্বেষপূর্ণ কর্ম, যার দ্বারা জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সঙ্গরোধ সংক্রান্ত নিয়ম অমান্য করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী ডাক্তার আমাকে জানাননি। স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এব্যাপারে আমি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। উনারা বলেছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চলমান লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠে না।
ঘটনার বিষয়ে স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলে সরকারি ভাবে কোন ধরনের বাধা নাই। এরপরও একজন ডাক্তার রোগী দেখার জন্য চেম্বারে যাওয়ার সময় ইউএনও’র এমন আচারণ অত্যন্ত দুঃখজনক। চিকিৎসকরা করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইউএনও’র এমন আচারণ চিকিৎসকদের হতাশ করে ফেলবে। যেই চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়েছে তার গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকলে মোটরযান আইনে মামলা দিতে পারতেন। তিনি মামলার কাগজে ডাক্তার উল্লেখ করে সংক্রমণ আইনে মামলা দিয়েছেন। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এছাড়া ইউএনও লোকজনের সামনে ডাক্তারদের নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। এজন্য ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।