চার কারণে কমছে নমুনা সংগ্রহ

কোনো ল্যাবে পুরনো নমুনা নেই : ল্যাব প্রধানরা
গরিবদের ফি এর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে : সিভিল সার্জন
ভূঁইয়া নজরুল :

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে গত কয়েকদিন ধরে ৫০০ এর বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছিল।  গত বৃহস্পতিবার ১৩২ ও এর আগের দিন বুধবার ২৩৭টি নমুনার পরীক্ষা করেছিল। নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবের ইনচার্জ ডা. আবুল কালাম বলেন,‘আমরা নমুনা কম পাচ্ছি। তাই স্বভাবতই আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে যা দেয়া হয় আমরা তা করে দিচ্ছি। এখন আমাদের কাছে কোনো নমুনা জমা নেই।’

এদিকে নমুনা কমের চিত্র শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে নয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কিছুদিন ২০০ এর উপরে নমুনা পরীক্ষা হলেও গত বৃহস্পতিবার মাত্র ৭৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। একইভাবে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাবে আগে ২০০ থেকে ৩০০ এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হলেও এখন তা ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার হয়েছে ১৮১টি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবেও কমছে নমুনা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাব ইনচার্জ ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মনিরুল ইসলাম বলেন,‘ আমরা ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারি, কুলগাঁও, বিবিরহাট, মেট্রোপলিটন পুলিশ, চিটাগাং আইসোলেশন সেন্টার ও চিটাগাং চেম্বার কেন্দ্রের নমুনা পেয়ে থাকি। এসব বুথ থেকে নমুনা কম আসছে। তাই পরীক্ষার পরিমাণও কমে গেছে। আমাদের কাছে কোনো নমুনা জমা নেই।’

চার কারণে কমছে নমুনা

নগরীর মধ্যে বিআইটিআইডি, জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া কিছু বুথেও সংগ্রহ হচ্ছে নমুনা। নমুনা সংগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে- ফি নির্ধারণ করায় গরিবরা পরীক্ষা করাতে আসতে পারছে না, আগে যারা কৌতূহলের বশে পরীক্ষা করতো তারা করাচ্ছে না, উপসর্গ না থাকলে করতে দেয়া হচ্ছে না, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমে গেছে তাই অনেকে আসছে না। এই চার কারণের কথা বলছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম হুমায়ুন কবিরের সাথে। তিনি বলেন,‘ আগে আমাদের এখানে অনেকে পরীক্ষা করাতে আসতো। কিন্তু এখন আগে নমুনা ফি জমা দেয়ার পর টাকা দেয়ার নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকে কমে গেছে নমুনা দেয়ার চাপ। একইসাথে লক্ষণ না থাকলেও আমাদের ডাক্তাররা নমুনা দেয়ার অনুমোদন দেন না।’

একই মন্তব্য করে বিআইটিআইডি ল্যাবের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ফি নির্ধারণ করায় সমাজের একটি গ্রুপ নমুনা দিতে আসছে না। আরেকটা গ্রুপ আগে কৌতূহলের বশে নমুনা দিতো, তারাও এখন দিচ্ছে না। এছাড়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমে যাওয়ায় ঘরে বসে ওষুধ খেয়ে নিচ্ছে আর পরীক্ষা করাচ্ছে না।’

মানুষের আতঙ্ক আগের চেয়ে অনেক কমেছে এবং মানুষ সাহসী হয়ে উঠেছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন,‘ আগে যেমন নমুনা দেয়ার জন্য মানুষের মধ্যে একটি চাপ কাজ করতো, এখন আর তেমন নেই। মানুষ এটিকে মোকাবেলা করার সাহস পেয়ে গেছে। এতে নমুনা দেয়ার হার যেমন কমছে তেমনিভাবে আক্রান্তের হারও কমছে।’

গরিবদের জন্য ভাবা হচ্ছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৮ জুনের পরিপত্র জারির পর থেকে নমুনা পরীক্ষায় ফি নেয়া হচ্ছে। বুথে নমুনা দেয়ার জন্য ২০০ টাকা করে, বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে ৫০০ টাকা করে এবং হাসপাতাল থেকে নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে ২০০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করা হয়। এখন গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ হার কমে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন,‘ ফি নির্ধারণ করায় মানুষ আর কৌতূহলের বশে এবং একজনের সংস্পর্শে আসায় নমুনা দিতে আসছে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ না পর্যন্ত নমুনা দেয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। আর মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্কও অনেক কমে গিয়েছে।’

গরিবরা পরীক্ষার বাইরে থাকছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘হুম, সমাজের একটি শ্রেণী বিশেষ করে যাদের সামর্থ্য নেই তারা করোনা পরীক্ষার বাইরে থাকতে পারে। তবে তাদের জন্য আমরা একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি। দেখা যাক কোনো নির্দেশনা আসে কিনা।’

চট্টগ্রামে গত ২৯ জুলাই ১৪৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, যা ছিল সর্বোচ্চ। পরবর্তীতে তা কমতে কমতে ২ জুলাই ১৩২৩, ৮ জুলাই ১২৬১ এবং ৯ জুলাই ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চট্টগ্রামে যেমন কমছে নমুনার পরীক্ষা তেমনিভাবে সারাদেশেও কিন্তু কমছে। সারাদেশে গত ২৬ জুন ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা হলেও গতকাল শুক্রবার ১০ জুলাই ১৩ হাজার ৪৮৮ নমুনা পরীক্ষা হয়।