চার উপজেলায় সংক্রমণ বেশি

গত ২১ দিনে হাটহাজারিতে ২৮০, বোয়ালখালীতে ১৭৫, পটিয়ায় ১৬৬ ও সীতাকুণ্ডে ১৪৪ জন করোনা আক্রান্ত #

ভূঁইয়া নজরুল :
হাটহাজারি উপজেলায় গত ২৭ মে পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ৫২ জন, ২১ দিন পর বুধবার ১৭ জুন পর্যন্ত এই উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩২ জনে পৌঁছেছে। এই উপজেলায় গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে ১৩ জনের বেশি। কিন্তু যখন সাতকানিয়া কিংবা লোহাগাড়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল তখনো এই এলাকায় কোনো করোনা আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ সংক্রমিত হওয়ার আগেই এই উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তারপরও চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সর্বাধিক করোনা সংক্রমিত এলাকাগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে হাটহাজারি। শুধু হাটহাজারি নয়, চট্টগ্রামের প্রায় সব উপজেলাতেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এতে উপরের দিকে হাটহাজারির পাশাপাশি রয়েছে পটিয়া, সীতাকু- ও বোয়ালখালী এলাকা।
গত ২৭ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২৬ জন। কিন্তু গত ২১ দিনে (১৭ জুন পর্যন্ত) তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৮০২ জন। তবে হাটহাজারি যদিও করোনা শানাক্তে শীর্ষে কিন্তু প্রথমদিকে যেভাবে সাতকানিয়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল সেখানে তেমন হারে বাড়েনি। ২৭ মে পর্যন্ত সাতকানিয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯ জন, বিপরীতে গত ১৭ জুন তা বেড়ে হয়েছে ১০৭ জন। অর্থাৎ সাতকানিয়ায় করোনার রোগীর বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম। এবিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোহাম্মদ নূর-এ-আলম বলেন, ‘ব্যবসা-অধ্যুষিত আমাদের এলাকায় প্রথমদিকে করোনার সংক্রমণ হার বেশি থাকার পর আমরা লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলতে জনসাধারণকে বাধ্য করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হারে জরিমানা করা হয়েছে অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষদের। এতে কাজ হয়েছে এবং মানুষও নিজের অবস্থা বুঝতে পেরেছে। ফলে সামাজিক সংক্রমণ মারাতœক হয়নি। প্রথম দিকের সেই ভয়ের কারণে বাইরের এলাকা থেকে এই এলাকায় মানুষের আগমনও কম ছিল।’
সাতকানিয়ার অনেক পরে হাটহাজারিতে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে আর হওয়ার পরপরই গত ২১ দিনে একলাফে প্রায় ৩০০ জন আক্রান্ত হলো। কেন হঠাৎ বাড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে হাটহাজারি উপজেলা নির্বাহি অফিসার রুহুল আমিন বলেন, ‘সামাজিক সংক্রমণ যাতে না হয় সেজন্য দেশে সবার আগে আমি বাজারকে খোলা মাঠে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখানকার মানুষ প্রথম দিকে লকডাউন মানেনি, প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি খেলা খেলেছে। একদিকে অভিযানে গেলে আরেক দিকে খোলা রাখা হতো। রমজান মাসে মার্কেটগুলোতে মানুষ শপিং করেছে। আর এতেই বেড়ে গেছে সংক্রমণ।’
সীতাকু-ে গত ২৭ মে ৭২ জন সংক্রমিত থাকলেও গত ১৭ জুন পর্যন্ত তা ২১৩ জনে গিয়ে পৌঁছে। এভাবে বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মিল্টন রায় বলেন, ‘আমার এলাকাটি শিল্প এলাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিল্প কারখানা চালু রয়েছে, প্রধান মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের থেকেও এলাকার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। আর এতেই এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।’
অপরদিকে কর্ণফুলীর ওপারে বোয়ালখালীতে গত ২৭মে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ জন, কিন্তু ২১ দিন পর ১৭ জুন পর্যন্ত এই আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে ১৯৫ জনে। বোয়ালখালীর উপজেলা নির্বাহি অফিসার আছিয়া খাতুনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বাসায় আইসোলেসনে রয়েছেন। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আশপাশের হাটহাজারি, পটিয়াসহ প্রায় সব এলাকাতেই করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং বোয়ালখালীতেও বেড়েছে। কি কারণে বাড়ছে তা বলা মুশকিল। এটা সামাজিক সংক্রমণে চলে যাওয়ায় এখন তা দ্রুত বাড়ছে।’
একই কথা বলেন পটিয়ার মেডিক্যাল অফিসার রেজোয়ান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় বাড়ছে করোনা রোগী, আর সেই সাথে আমাদের উপজেলায়ও।’ গত ২৭ মে পর্যন্ত এই উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ জন থাকলেও গত বুধবার পর্যন্ত তা ২৩৪ জনে পৌঁছে।
এদিকে চট্টগ্রামের পাঁচটি ল্যাবে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই হার আগামীতে আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষের অবাধ চলাফেরার কারণে চলতি মাসেও এই সংক্রমণ বাড়তির দিকে থাকবে। মানুষ সামাজিক দূরত্ব না মানায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই বাড়ছে করেনা রোগী।
জেলা সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, চট্টগ্রামে এপর্যন্ত (১৭ জুন) ৫ হাজার ৭৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মহানগরীতে ৩ হাজার ৯৫১ জন ও উপজেলাগুলোতে ১ হাজার ৮০২ জন। ১৪ উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়ায় ১০৭ জন, সীতাকু-ে ২১৩ জন, বোয়ালখালীতে ১৯৫ জন, পটিয়ায় ২৩৪, আনোয়ারায় ৬৮, চন্দনাইশে ১৩২, ফটিকছড়িতে ৬৩, মিরসরাইয়ে ৩৮, হাটহাজারিতে ৩৩২, লোহাগাড়ায় ১০১, সন্দ্বীপে ২৫, রাঙ্গুনিয়ায় ৯৬, বাঁশখালীতে ৮৪ ও রাউজানে ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জন ঘোষিত লাল, হলুদ ও সবুজ জোনের মধ্যে ৯ উপজেলা (আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারি, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজন ও সীতাকু-) লাল জোনে রয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া হলুদ জোনে এবং মিরসরাই ও সন্দ্বীপ রয়েছে সবুজ জোনে। গত ৩১ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত প্রতি একলাখ জনসংখ্যার মধ্যে কোনো উপজেলায় ১০ জন বা এর বেশি আক্রান্ত হলে লাল, ৩ জন বা এর বেশি আক্রান্ত হলে হলুদ এবং ৩ জন এর কম আক্রান্ত হলে সবুজ জোনে রাখা হয়েছে।