চসিকের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন : নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে হবে

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)র সেবা ও কাজের গতি বাড়াতে এর অধীন ৬টি প্রশাসনিক জোন সৃষ্টি করা হয়েছে। নগরীর প্রায় ৬০ লাখ অধিবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে রোববার থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে ১টি জোন হবে। এর একজন প্রধান নির্বাহী থাকবেন। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একজন নির্বাহী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি আঞ্চলিক জোনের আওতায় প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ও প্রশাসন শাখা থাকবে। এছাড়া হিসাবরক্ষণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সমাজকল্যাণ, পূর্ত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ-এসব বিষয়ও থাকবে আঞ্চলিক অফিসগুলির আওতায়। গত ৫ আগস্ট চসিকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে এবং পুরাতন পরিষদ বিলুপ্ত হয়েছে। চসিক এর কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওয়ার্ডগুলি ভাগ করে ওয়ারিশান সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষণে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করার এসব কাজ সহজ ও দ্রুত সম্পাদন করা যাবে। সেবাকাজ ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মানুষ চসিক অফিসে ছুটাছুটি না করে আঞ্চলিক কার্যালয়ে সমস্যার সমাধান পাবেন তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী যাতে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন তা চসিক প্রধান কার্যালয়কে দেখতে হবে। ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট সময় করে অফিসে বসবেন, নগরবাসী সরাসরি তার কাছে অভিযোগ-সমস্যার কথা জানাতে পারবেন; এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা প্রয়োজন।
এখন সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধি ব্যাপকতা পেয়েছে, উন্নত দেশে উন্নয়ন ও সকল ধরণের সেবাকাজ মেয়রের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হয়। আমাদের এখানে সরকারের নানা সেবা সংস্থা রয়েছে। এরা সিটি মেয়রের কাছে জবাবদিহি করেন না, সমন্বয়ও নেই। নগরীর প্রকৃতি পরিবেশের ধ্বংসসাধন চলছে নির্বিচারে অথচ সিটি কর্পোরেশনের সেখানে কিছু করার নেই, নগরবাসীকেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হচ্ছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেকগুলি সংস্থা কাজ করছে অথচ অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো নয়।
দেশিÑবিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থা চসিকের নানা পরিকল্পনায় অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধিও বিস্তৃত হচ্ছে। সে অনুসারে দক্ষ লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টও প্রয়োজন। গবেষণা, পরিসংখ্যান, সঠিক পরিকল্পনা সুষ্ঠু নগরায়ণের অন্যতম শর্ত অথচ চসিকে এতদসংক্রান্ত দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
চসিকের নতুন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুমোদনহীন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প, ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও পণ্যসামগ্রী রাখার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এ কাজ প্রশংসাযোগ্য সেই সাথে নগরীর রাস্তাঘাটের আশু সংস্কার, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিয়মিত চালু থাকা প্রয়োজন। নগরীর ফুটপাত এখনো সর্বাংশে দখলমুক্ত হয়নি।
আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে চসিক প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অধ্যায়ে প্রবেশ করলো; কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে প্রত্যাশিত সেবা দেওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন-এটি নগরবাসীর আশা করে। নগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য অক্ষুণœ না থাকলে, সকল পর্যায়ে সমন্বয় না থাকলে নতুন প্রশাসনিক উদ্যোগে চমক থাকবে, নগরবাসীর দুর্ভোগের অবসান হবে না।