মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ :
চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় শুকিয়ে গেছে পুকুর-জলাশয়ের পানিও। এতে করে খাবার পানির যেমন সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি নিত্য ব্যবহারের পানির সংকটও যোগ হয়েছে। অবস্থা এমন যে, অগভীর টিওবয়েলগুলোতে পানি তোলার পাম্প বা মোটর মেশিন বসিয়েও এক ফোঁটা পানি উঠছে না। ফলে বাধ্য হয়েই মানুষকে পানি আনতে হচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে। নয়তো ব্যবহার করতে হচ্ছে পুকুরের পানি। সবমিলিয়ে পানির জন্য রীতিমত হাহাকার শুরু হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ গাছবাড়িয়া, গাছবাড়িয়া, পৌর সদর, সাতবাড়িয়া, বরমা শেবন্দী এলাকা ইউনিয়নসহ অনেক গ্রামে টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও চন্দনাইশ পৌরসভার বেশ কয়েকটি জায়গায়। এসব এলাকায় সামর্থ্যবানরা ৯০ থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করে সাব-মার্সিবল কিংবা বসিয়ে পানি পেলেও দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়াতে অনেকেই সেখানে চাইলেই যেতে পারেন না। আবার যেতে চাইলেও লোকলজ্জা আর দূরত্ব বাধ সাধে। তবুও বিশুদ্ধ পানির অভাব মেটাতে সব বাধ ভেঙে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ উদ্যোগেই নিজ বাড়ি থেকে পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পানির স্তর দিনদিন নিচে নামতে থাকায় শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছরই এ সংকটে পড়তে হয় লোকজনকে। মূলত এ সংকটের সূত্রপাত হয় প্রায় বছর দশেক আগে থেকে। প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর ক্রমশ নিম্নগামী হওয়াতে এ সংকট ধীরেধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে এসব এলাকায় সাধারণ টিউবওয়েলের পানির প্রবাহ কমতে থাকে। মার্চ-জুন মাসে পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাধারণ টিওবওয়েলগুলোতে পানি পড়ছে না। দুই এক কিলোমিটার দূরে কোনো টিওবওয়েলে পানি আসলে সেটিতে ভিড় করছে মানুষ। সেখান থেকেই কেউ কাঁধে আবার কেউ মাথায় কলসি চেপে নিয়ে আসছেন পানি। পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। আবার কোন কোন এলাকায় পুকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে, নয়তো কমে গেছে। এতে করে খাওয়ার পানির সঙ্গে দেখা দিয়েছে ব্যবহার উপযোগী পানির সংকটও।
রোজা রেখে দূর-দূরান্তে গিয়ে পানির সংকট মেটাতে গিয়ে হাঁসফাঁস খেয়ে উঠছে মানুষ। এছাড়াও ফসলি জমিতে সেচ দিতেও কৃষকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিকল্প পন্থায় পানি উত্তোলনের চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
চন্দনাইশ পৌর এলাকায় ৮ ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাছবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুল খালেক, আবদুল আজিজ ও মো. আবদুর রউফ জানান, পানির সংকট এখন গ্রামের পর গ্রামে। আগে এত খাবার পানি সংকট হয়নি। এ বছর গ্রামের প্রতিটি টিউবওয়েলই অকেজো। টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট করছি। আমাদের তো গভীর নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্য নেই। তাই এখন পুকুরের পানিতেই জীবন বাঁচাতে হচ্ছে।
গাছবাড়িয়া এলাকার কলঘর গ্রামের ডেজি আকতার জানান, তাদের বাড়ির টিউবওয়েলে এখন আর পানি উঠে না। তাই অন্য বাড়ি থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়।
পৌরসভার গাছবাড়িয়া বাসিন্দা ইব্রাহীম জানান, তার বাড়ির অগভীর নলকূপটির পানি প্রবাহ ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের বাড়ি সহ আশেপাশের প্রায় সকল টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ ঝর্ণার পানি কম আসছে। সাতবাড়িয়া গ্রামের কবির আহমেদরও একই অবস্থা। পাশের পাড়ির গভীর নলকূপে পাইপ লাগিয়ে তিনি পানি সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপন ও ফসলি জমিতে সেচ ও গভীর নলকূপগুলোর জন্যই মূলত পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই সাধারণ টিওবওয়েলে পানি উঠছে না। অতিরিক্ত পানি অপচয় ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতেরও কারণ রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গভীর টিওবয়েলেও একসময় পানি পাওয়া যাবে না। তারা বলছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রায় আড়াইশটি সরকারিভাবে সাব-মার্সিবল বা গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরেও প্রায় তিনশটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।
এসব ব্যাপারে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) মো. ফরহাদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা এই মৌসুমে হয়েই থাকে, উপজেলার পৌর এলাকা ও সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যে কারণে টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। টিউবওয়েলে পানি না আসার বিষয়টি লোকজন আমাদের জানাচ্ছেন। আমি সরেজমিনে অনেক জায়গা ঘুরে এসেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, পানি সংকট সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূগর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলন, সেচ কাজে বিভিন্ন সময় পাম্প দিয়ে অতিরিক্ত পানি তোলার কারণে ওয়াটার লেভেল নিচে চলে আসছে বলেও জানান তিনি। সরকারিভাবে স্থাপন করা সাব-মার্সিবল বা গভীর নলকূপ পাম্পগুলোতে পানি উঠছে। লোকজন উপকৃত হচ্ছে ও জনগণ তার সুফল পাচ্ছে।