শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের ভবন নির্মাণ
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
চকরিয়ায় এবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি বিপুল টাকা বরাদ্দে বিদ্যালয় ও মাদরাসার নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজে উন্নতমানের রড ও সিলেটি বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসমুহ তা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল লোকজন। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে তাজুল উলুম মাদ্রাসার চারতলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজে বড়ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। কার্যাদেশ অনুযারী ভবন নির্মাণে উন্নতমানের রড ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ভবনটির নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল বাংলা রড। কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সুত্র জানায়, চলতি অর্থবছর চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৬টি মাদ্রাসা ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারতলাবিশিষ্ট আধুনিকমানের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজসহ এবং সেকে-ারি স্কুল ইমপ্লিমেন্টেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কর্মকা- বছরের প্রথমদিকে শুরু হয়। এরমধ্যে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে তাজুল উলুম মাদ্রাসা এবং একই পরিমাণ অর্থবরাদ্দে ডুলাহাজারা মারূফিয়া মাদ্রাসার নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস তৌহিদ অ্যান্ড ব্রাদার্স। অপরদিকে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দে চকরিয়া উপজেলার আমজাদিয়া রফিকুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার চারতলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ পায় কক্সবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপঙ্কর বড়ুয়া। চলতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যাদেশ পেয়েই কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানসমুহ। কাকারা তাজুল উলুম মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেছেন মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান। তিনি বলেন, ঘটনা জানতে পেরে আমি শিক্ষাপ্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাই। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালাই কাজে লাগানো বাংলা রড খুলে নিতে বাধ্য হয়।অভিযোগ নাচক করে কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান ও কক্সবাজার শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী রাসেল চৌধুরী বলেন, ছাদ ঢালাই কাজে বাংলা রড ব্যবহারের বিষয়টি সবাই দেখেছে। তবে ভবনের নিচের অংশের নির্মাণকাজে কোন অনিয়ম হয়নি। শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভবনের গাঁথুনির কাজ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এখন উন্নতমানের ছাদ ঢালাই কাজে বসানোর কাজ করছেন ঠিকাদারের লোকজন।জানতে চাইলে নির্মাণকাজে অনিয়মের বিষয়টি অবান্তর বলে দাবি করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আহমেদ কবির চৌধুরী। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ছাদ ঢালাই কাজে বাংলা রড ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের যৌক্তিকতা নেই। রডের ব্যাপারে প্রশ্ন আসলে বা নিম্নমানের রড ব্যবহার করার অপরাধে আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার পথ খোলা ছিল।
কিন্তুতা না দেখে শুধুই রডের অজুহাতে নির্মাণকাজের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ছুঁেড় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কক্সবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.কামরুল আহসান বলেন, কাকারা তাজুল উলুম মাদ্রাসা ভবনের ছাদ ঢালাইকাজে বাংলা রড ব্যবহার করার বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিই। কোয়ালিটি ভালো হোক, তবু এলাকাবাসী বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ থাকলে এধরনের উপকরণ ব্যবহার হবেনা। তিনি বলেন, ওই মাদ্রাসা ভবনের বেইজ ঢালাই কাজে শিডিউল মোতাবেক উন্নতমানের উপকরণ ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। মোটকথা ভবনের গাঁথুনি কাজে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাতে ভবনের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। চকরিয়া- পেকুয়া উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ভবন নির্মাণকাজে দুর্নীতির লাগাম টানতে নজরদারি রাখা হয়েছে।