কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সিদ্ধান্তে টিআইবির সাধুবাদ

১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারকে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বংলাদেশে (টিআইবি)। একই সঙ্গে এলএনজি বা তেলভিত্তিক নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (২৬ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অবস্থানের কথা জানায় টিআইবি।

এতে উল্লেখ করা হয়, তহবিল সংগ্রহে সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত ১০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন না করার সরকারি সিদ্ধান্তকে, সতর্ক সাধুবাদ জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে কয়লা বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তেও উদ্ধেগ প্রকাশ করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ খাতে আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত উদ্বেগ এবং স্থানীয় জনগণের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ স্বত্ত্বেও পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলায় সরকার বড়সংখ্যক কয়লাভিত্তিক প্রকল্প স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের বোধোদয় হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, প্যারিস চুক্তিসহ ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তাবয়নে সরকার অধিকতর সচেষ্ট হবে এবং সংশোধন হতে যাওয়া বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পুরোপুরি সরে আসার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ৯ হাজার ৩ শ’ ৪৭ মোগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ১০টি প্রকল্প বাতিল করা হলে, আরও প্রায় ১৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এখনও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। যার মধ্যে রামপাল, মাতারবাড়ি ও মিরসরাইসহ ৮টি কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ সরকার ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসব কেন্দ্র থেকে পেতে চায়।

সরকারের এই পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন রেখে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের যে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় চারভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরকার কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকেই পেতে চাইছে। আবার বাতিলকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে ব্যয়বহুল এলএনজি এবং জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। যেটি বাংলাদেশকে ২০৩০ সলের মধ্যে এশিয়ার অন্যতম কয়লা ও কার্বন দূষণকারী দেশে রূপান্তরিত করবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কয়লা এবং এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে না।

অন্যদিকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও, এই উৎসগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সুনির্দিষ্ট পথরেখা এখনও সরকার প্রণয়ন করেনি। ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৭ শত ৩০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন হচ্ছে, যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ক্রমশ হ্রাস পেলেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং এ খাতকে পর্যাপ্ত গুরত্ব প্রদান না করায়, ২০২১ সালেও নির্ধারিত লক্ষের অর্ধেকও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় টিআইবি আশা করে, ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি সংগ্রহে সরকার একটি কার্যকর রূপরেখা প্রণয়নের মাধ্যমে এ খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করবে। সর্বোপরি, জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।