কোভিড ঝুঁকির কারণে ‘স্থিতিশীল’ খালেদা বাসায় : চিকিৎসক

সুপ্রভাত ডেস্ক »

করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণেই এখন ‘শারিরীকভাবে স্থিতিশীল’ খালেদা জিয়াকে বাসায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার বিকাল ছয়টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে হাসপাতালের মিলনায়তনে খালেদার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার তার বাসায় ফেরার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি জানান, বাসায় স্থানান্তর করা হলেও খালেদা জিয়া এখনও অসুস্থ। তাকে যে অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল সেই অবস্থা থেকে তিনি এখন ‘স্থিতিশীল’।
পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তেই তাকে ‘আপাতত’ বাসায় নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের নতুন যেসব জটিলতা তৈরি হচ্ছে সেগুলোই এখন বড় ‘চ্যালঞ্জিং’।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বুকে ব্যথা নিয়ে ১০ জুন গভীর রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে এনজিওগ্রাম করে তার হৃদযন্ত্রে একটি স্টেন্ট বসানো হয়।
একটি ব্লক অপসারণ করা হলেও খালেদার হৃদপিণ্ডে আরও দুটি ব্লক ধরা পড়ার কথা চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ওই হাসপাতালে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।
শুক্রবার খালেদার হাসপাতাল ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির জন্য কোভিড বাড়তেছে, উনাকে এখানে রাখতে চাচ্ছি না। কারণ কোভিড প্লাস ইনফেকশন ইজ এ চান্স। এসব কারণে তার যদি এগুলো হয় তাকে আবার ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে নিয়ে চলে যাবে। সেজন্য আমরা পূর্নাঙ্গ মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তাকে আপাতত বাসায় নেয়া হোক।
‘পরে যদি কোনো কমপ্লিকেশন হয় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।’
বাসায় থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসনকে পুরোদমে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হবে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান বাকি দুটো ব্লক অপসারণ না করার কারণও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আরও যে দুটো ব্লক রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক গাইডলাইন হচ্ছে যে, যেই রক্তনালীর ব্লকের জন্য তার সমস্যা হচ্ছে ওটা করে চলে আসো। ডু ইট অ্যান্ড কামঅন অ্যান্ড সেইভ দ্যা পেসেন্ট। আমরা ওটা করেছি।
এখন দ্বিতীয়টা করি, তৃতীয়টা করি- কোনো কোনো পেসেন্টের করা হয় যেসব পেসেন্ট শকে থাকে। যারা দেখতেছে তারা মরে যাবে যদি না করি অথবা রক্তনালীগুলো বড় থাকে, যাদের কোনো কমপ্লিকেশন নাই, যাদের লিভার ডিজিস নাই, কিডনি ডিজিস নাই, চান্স অব হার্ট ফেলিউর নাই-তখন আমরা করে আসি। ‘আদারওয়াইজ আমাদের সেকেন্ড-থার্ড করার কোনো নিয়ম নাই। কারণ আপনি দেখেন উনার (খালেদা) একটা ব্লক অপসারণ করতে গিয়ে তার কিন্তু কিডনি সাটডাউন হয়েছে, হার্ট ফেইলিউর হয়েছে। ওই দুইটা যদি করতাম তার কিডনি টোটাল সাটডাউন হত। সেজন্য আমরা ওই দুইটা ব্লক অপসারণ করিনি।’
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘ম্যাডামের অনেক জটিল অসুস্থতা আছে। উনার রেনাল ফিলিউর, উনার বিল্ডিংয়ের চান্স, উনার যে সিরোসিস অব লিভার সেটা কিন্তু রয়ে গেছে। সেটার কোনো চিকিৎসা হয় না।
‘আমরা শুধু উনার বিল্ডিং স্পটগুলোকে লাইগেশন করে দিয়ে বন্ধ করে রেখেছি। সেগুলোর কি অবস্থায় গত ৬ মাসে আমরা কিন্তু ফলোআপ করতে পারিনি। এখন এই কার্ডিয়াক কন্ডিশনের জন্য উনার ফলোআপ করাটা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা যা করার করছি। আল্লাহর অশেষ রহমত, আমরা সামহাউ আমাদের সিদ্ধান্তগুলো এখন পর্যন্ত অলনাইট আপটু হার সারভাইভেল।’
খালেদা জিয়ার সব জটিলতা কাটাতে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি আবারও ‘উন্নত দেশের উন্নত সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এটা আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং উনার জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. শেখ ফরিদ আহমেদ, ডা. মো. জাফর ইকবাল ও ডা. আল মামুন এবং হাসপাতালের মেডিক্যাল প্রমোশন বিভাগের প্রধান বিনয় কাউল উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ দফায় বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হল।
এর আগে ৬ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে একই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
এরপর থেকে গুলশানের ওই বাসায় থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৬ বয়সী খালেদা জিয়া। মাঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কয়কে দফায় হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।